Wednesday, September 19, 2012

‘বাংলাদেশ দখল করে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায়’ : ভারতে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা আবারও তুঙ্গে

ভারতে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা আবারও জোরদার হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা কিছুটা স্তিমিত থাকলেও সম্প্রতি আবার লক্ষণীয়ভাবে তা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় এরই মধ্যে সরব হয়েছে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো। পেছন থেকে এসব প্রচারণায় মদত জোগাচ্ছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশবিরোধী পুরনো প্রচারণাই আবার শুরু করেছে ভারত। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ইসলামী জঙ্গিদের আস্তানা, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতাকামীরা বাংলাদেশ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পায়। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও পাকিস্তানের ভারতবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

তবে এবারের প্রচারণার ধরন কিছুটা পাল্টেছে। ভারতের এখনকার প্রচারণার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও বিএনপির রাজনৈতিক সহযোগী জামায়াতে ইসলামী। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী স্বাধীনতাকামী ও ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারা। বর্তমানে ‘ভারতের প্রকৃত বন্ধু’ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় ভারতবিরোধী এসব গোষ্ঠী সুবিধা করতে পারছে না। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন হাসিনা। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলেই এ ধারা পাল্টে যাবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাবে ভারতবিরোধী ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী ও দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতাকামীরা। উল্লেখ্য, চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ভারত সরকার এসব প্রচারণা চালিয়েছে।

ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায় এ সংক্রান্ত একটি নিবন্ধে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পতনের আশঙ্কা প্রকাশ করার পর ভারতের গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা জোরদার করেছে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে ‘ইন্ডিয়া’স ওরিস কুড মাউন্ট উইথ খালেদা জিয়া’স এক্সপেকটেড রিটার্ন টু পাওয়ার ইন বাংলাদেশ (বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনায় ভারতের শঙ্কা বাড়তে পারে)’ শিরোনামে ওই নিবন্ধে বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নামায় ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতায় আসার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় কীভাবে ছক উল্টে দেয়া যায় সেই পরিকল্পনা করছে ভারত। খালেদা জিয়াকে ভারতবিরোধী ও বিএনপিকে ইসলামী জঙ্গিবাদের আশ্রয়তাদা হিসেবে উল্লেখ করা হয় ওই নিবন্ধে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে নিবন্ধটি প্রকাশের পর চার শতাধিক মন্তব্য এসেছে। পাঠকরা মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশীরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা ভুলে গেছে। 

অনেক পাঠক মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের মতো পুঁচকে রাষ্ট্রকে ভারত দখল করে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। কেউ কেউ আবার বলেছেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ভারতকে বিরক্ত করলে ভারতের উচিত হবে সামরিক শক্তি দিয়ে এর জবাব দেয়া। উল্লেখ্য, ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায় যেসব পাঠক এসব মন্তব্য করেছেন তারা উচ্চশিক্ষিত। প্রতিবেশীদের সম্পর্কে তাদের এমন মানসিকতায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।

ওই নিবন্ধ প্রকাশের পরপরই ভারতের আরেক প্রভাবশালী ও অন্যতম প্রাচীন দৈনিক পাইওনিয়ারে ‘লেট অ্যা ট্রু ফ্রেন্ড ডাউন অ্যান্ড ফেস দ্য মিউজিক (একজন প্রকৃত বন্ধুর পতন হতে দেয়া বিপজ্জনক)’ শিরোনামে জি পার্থসারথির লেখা এক নিবন্ধে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে উত্সাহিত করে থাকেন। তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে অবাধে এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিয়েছেন। শুক্রবার দৈনিকটির ওই নিবন্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০০৪ সালে আল কায়দা ও হরকাতুল জিহাদের জঙ্গি সদস্যদের সহযোগিতায় বিএনপি শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের খাঁটি বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশের এই নেতা (শেখ হাসিনা) ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড. মাহুবব উল্লাহ এ সম্পর্কে এক নিবন্ধে লিখেছেন, ভারতের বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীর নামে এসব নিবন্ধ লেখা হলেও এগুলো আসলে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থারই কারসাজি। তারাই বাংলাদেশবিরোধী এসব প্রচারণা চালিয়ে বিএনপিকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে চায়।

আসামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বোড়োদের দ্বারা বাংলাভাষী মুসলিমরা গণহত্যার শিকার হওয়ার পরও ভারতের মূলধারার বহু গণমাধ্যম, অনেক বুদ্ধিজীবী এবং বিজেপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা জোরদার করেছে। তারা অভিযোগ করে, আসামে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশী মুসলিমরাই আসাম দাঙ্গার মূল হোতা। আসামের মুসলিম নিধনযজ্ঞকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বনাম অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের সংঘাত বলেও মন্তব্য করেন তারা।

আউটলুকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজেপির সভাপতি নিতিন গাদকারী বলেছেন, ‘আসামের সহিংসতা হলো ভারতীয় বংশোদ্ভূত বনাম অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যকার সংঘাত।’ বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ারও আহ্বান জানান বিজেপি সভাপতি।

বিজেপির শীর্ষ নেতা এলকে আদভানী বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীরাই আসাম দাঙ্গার জন্য দায়ী। অবৈধ বাংলাদেশীরা আদিবাসীদের (বোড়োদের) বিপুল পরিমাণ জায়গা দখল করে নিয়েছে।’ কট্টরপন্থী হিন্দু জঙ্গি নেতা রাজ থ্যাকারে বলেছেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের (বাংলাদেশীদের) নিরাপদ স্বর্গে পরিণত হয়েছে উত্তর প্রদেশ ও বিহার। সেখান থেকে মুম্বাইয়ে এসে তারা ঝামেলা তৈরি করছে।’ হিন্দু জঙ্গি সংগঠন ভিএইচপি নেতা প্রাভিন টোগাদিয়া বলেছেন, ‘সমগ্র ভারতে তিন কোটি অনুপ্রবেশকারী মুসলমান রয়েছে। যুদ্ধ করে তাদের দেশ ছাড়া করতে হবে।’ বিজেপি নেতা ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশ জটিল সমস্যা তৈরি করছে, যার সামান্য নমুনা দেখা গেছে আসামে।’ হিন্দু জঙ্গি সংগঠন আরএসএস দত্তত্রেয়া হোসাবালে বলেছেন, ‘এটা (আসামে সহিংসতা) খাঁটি ভারতীয় ও অবৈধ বাংলাদেশী মুসলমানদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।’ অবশ্য ভারতেরই বহুল প্রচারিত আউটলুক সাময়িকীর চলতি সংখ্যার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে ভারতে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

টাইমস অব ইন্ডিয়ায় মন্তব্য-বাংলাদেশকে দখল করে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায় : টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ‘ইন্ডিয়া’স ওরিস কুড মাউন্ট উইথ খালেদা জিয়া’স এক্সপেকটেড রিটার্ন টু পাওয়ার ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশ করার পর চার শতাধিক মন্তব্য এসেছে। পাঠকরা মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের মতো পুঁচকে রাষ্ট্রকে ভারত দখল করে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। কেউ কেউ আবার বলেছেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ভারতকে বিরক্ত করলে ভারতের উচিত হবে সামরিক শক্তি দিয়ে এর জবাব দেয়া।

হায়দরাবাদ থেকে লুঙ্গিওয়ালা নামে (সম্ভবত বাংলাদেশীদের অপমান করার জন্যই এই ছদ্মনাম) একজন লিখেছেন ভারত চারদিকেই শত্রুরাষ্ট্র পরিবেষ্টিত। এ অবস্থার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠা। অজ্ঞাতনামা একজন কলকাতা থেকে লিখেছেন, ভারত যদি বাংলাদেশকে তার অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে নেয়, তাহলেই ল্যাঠা চুকে যায়। অন্য একজন লিখেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে প্রকাশ্যে ও গোপনে সহযোগিতা করেছিল ভারত। এখন বাংলাদেশের উচিত সর্বতোভাবে ভারতকে সহায়তা করা।

নয়াদিল্লি থেকে এস সুন্দারাম লিখেছেন, কংগ্রেসের আস্কারা পেয়ে বাংলাদেশ মাথায় উঠেছে। গোসাইগাঁ থেকে রত্নরাজব্রহ্মা লিখেছেন, ভারতের প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে হবে। আসামে বাংলাদেশী নির্বোধদের অপতত্পরতা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। বাংলাদেশ সীমান্তে ইলেকট্রিক বেড়া দেয়া ছাড়াও সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনোভাবে অনুপ্রবেশ না ঘটে তার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে। তারপরও কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে গুলি করে হত্যা করতে হবে। ভারতবিরোধী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর ভারতের জন্য কোনো ফালতু ঝামেলা তৈরি করলে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে ব্যবহারে মোটেই ইতস্তত করা ঠিক হবে না।

মাঙ্গালোর//////থেকে প্রিন্স নামের একজন কৌতুক করে বাংলাদেশকে দখল করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এভাবে : বাংলাদেশের সব লোককেই আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। তাহলে উপহার হিসেবে দেশটির ভূখণ্ড পাওয়া যাবে। পুনে থেকে এস মোহন লিখেছেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে এত শঙ্কিত হওয়ার কী আছে। বিষয়টি দেখার জন্য সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’কে দায়িত্ব দিলেই তো হয়ে যায়! তাছাড়া বাংলাদেশকে তো আমরা চারদিক থেকেই ঘিরে রেখেছি।

গুরগাঁও থেকে সঙ্গীত জেইন লিখেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভারতকে সব কিছু করতে হবে। শেখ মুজিবকে রক্ষায় ভারত ব্যর্থ হওয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত যা পেয়েছিল তা জলে গেছে। মুম্বাই থেকে শচীন দিচোলকার লিখেছেন, সময় এসেছে ভারতের সীমান্ত প্রসারিত করার। যুদ্ধ করে পুরো বাংলাদেশকে দখল করে নিতে হবে। কানপুর থেকে প্রাভিন মিশ্র লিখেছেন, হতাশার বাংলাদেশে শেখ হাসিনাই ভারতের জন্য একমাত্র আশার আলো। অন্য একজন লিখেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

দুবাই প্রবাসী কল্যাণ দেব লিখেছেন, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উত্স। বাংলাদেশ থেকে যেসব সন্ত্রাসী ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করবে, তাদের নির্বিচারে গুলি করার অনুমতি দিতে হবে বিএসএফকে। আর ভারতীয় মুসলমানদেরও উচিত শিক্ষা দিতে হবে। হায়দরাবাদ থেকে মিন্টু ঘোষাল লিখেছেন, অন্যান্য মুসলিম দেশের মতোই বাংলাদেশও একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। কিন্তু এই সত্য কথাটি বলতে অনেকেই ইতস্তত বোধ করেন।

পরিচয় গুপ্ত লিখেছেন, ‘স্ট্যাম্প সাইজের বাংলাদেশকে সামাল দিতে হবে। বাংলায় একটি কথা আছে, ছোট কুয়াশার কারণে অতিকায় হাতির পা মাটিতে আটকে যেতে পারে। প্রভাত লিখেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকা থেকে বাংলাদেশীদের লাথি দিয়ে বের করে দিতে হবে। দিল্লি থেকে দীনেশ প্রভাকর লিখেছেন, ১৯৭১ সালে ভারত বিশাল ভুল করেছে। পাকিস্তানিরাই তো বাংলাদেশীদের খতম করে দিত। তার এ মন্তব্যকে সমর্থন করেছে শতাধিক পাঠক। ব্যাঙ্গালোর থেকে মনোজ লিখেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমান্ত বন্ধ করে সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে হবে।

দিল্লি থেকে হরিশিব শ্যাম লিখেছেন, হাসিনাকে যদি ক্ষমতায় রাখা না যায় তবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় পাকিস্তানে পরিণত হবে। মুম্বাই থেকে কায়া লিখেছেন, বাংলাদেশকে শায়েস্তা করতে হলে নরেদ্র মোদীকে (গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা) ক্ষমতায় আনতে হবে। তিনি জানেন, কীভাবে সন্ত্রাসীদের শিক্ষা দিতে হয়। গোয়া থেকে এন্টিনিও বারবোসা লিখেছেন, বাংলাদেশের সরকারই শুধু ভারতবিরোধী নয়। নতুন প্রজন্মও জানে না যে আমরা তাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলাম। নতুন প্রজন্মকে সেই ইতিহাস শিক্ষা দেয়ার জন্য টাকা খরচ করতে হবে।

রনবীর লাম্বা লিখেছেন, বাংলাদেশের নিজ শক্তিতে চলার সামর্থ্য নেই। চীন বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে পারে। অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার আগেই বাংলাদেশকে দখল করে নিতে হবে। অন্যথায় সামনে আমাদের কঠিন সময়। ব্যাঙ্গালোর থেকে সায়েক লিখেছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বোধ পাকিস্তান আর বাংলাদেশ সংলগ্ন সমস্যা। এই দেশ দুটির কোনো উন্নতি হবে না। তারা গোল্লায় যাবে। মেভারিক নিও লিখেছেন, ভারতের কংগ্রেস সরকার যদি বাংলাদেশের মতো একটি দেশকে সামাল দিতে না পারে তাহলে তারা জাতিসংঘে স্থায়ী আসনের দাবি করে কীভাবে?

ভাস্কর মিত্তাল লিখেছেন, ভারতের প্রশিক্ষিত বন্দুকধারীদের বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। তারা ভারতবিরোধীদের শেষ করে দেবে। হরিয়ানা থেকে দেব কুমার লিখেছেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা চারদিকে এরকম দুর্বৃত্ত দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। জগন্নাথান লিখেছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। বিজেপি ও কংগ্রেসের কালো টাকা আছে। 

তারা সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনে বন্ধু সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। বাংলাদেশীরা গরিব। টাকা দিয়ে তাদের কেনা যায়। অন্য একজন লিখেছেন, এত দিন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করেছে। নিশ্চয়ই তাদের লোকজন বাংলাদেশে রয়েছে। এখন আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশীদের খতম করতে হবে।

ব্যাঙ্গালোর থেকে কেএস রাও লিখেছেন, ইসলামী চরমপন্থীরা বাংলাদেশের ক্ষমতায় এলে ভারতকে সেনা হস্তক্ষেপ করতে হবে। তবে এটা ঠিক যে শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো। দিল্লি থেকে রাজগুরু লিখেছেন, ভারতেও সরকার পরিবর্তন হবে। (বিজেপি ক্ষমতায় এলে) বাংলাদেশকে আজীবনের শিক্ষা দেয়া কোনো ব্যাপার হবে না। তার এ মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন অন্তত ৬৭ জন। বিজয়প্রতাপ সিং বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতের ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি বড় হতে পারে পারে না। পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে কীভাবে শিক্ষা দিতে হয় তা আমরা জানি। নেভিয়েন লিখেছেন, বাংলাদেশ ভারতের একটি ক্ষুদ্র অংশের সমান। অথচ আমরা তাকেই ভয় পাচ্ছি। আমরা যদি এভাবে উদারতা দেখাতে থাকি, তবে অন্য ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোও আমাদের ভয় দেখাবে।

চেন্নাই থেকে গোবিন্দ লিখেছেন, পাকিস্তান যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তখনই বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর একটি সুবর্ণ সুযোগ ছিল। তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছুটা প্রতিক্রিয়া দেখালেও সেটা সামাল দেয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু দূরদর্শিতার অভাবে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন আবার সে রকম সুযোগের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তিনি আরও লিখেছেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ছিল ভারতের জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। এর কোনো বৈধতা নেই। ভারত ভেঙে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জন্মকে আমরা সহ্য করছি। কিন্তু অনাদিকাল পর্যন্ত এটাকে মেনে নেয়া যায় না।

টরেন্টো থেকে কিং লিখেছেন, বাংলাদেশ একটি ইসলামী রাষ্ট্র। আর ইসলামপন্থীরা বিশ্বাস করে যে কাফের ও তাদের সহযোগীদের রক্তে আল্লাহ খুশি হন। কাজেই ভারতের সীমান্তে বেড়া সমাপ্ত করতে হবে এবং কৌশলী হতে হবে। অন্য একজন লিখেছেন, বস্তুত চীনের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ভেঙ্কাট রমন লিখেছেন, খালেদা জিয়া আবারও ক্ষমতায় আসতে পারে। তাই ভারতে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশীদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেই তাদের বাংলাদেশে পাঠানো শুরু করতে হবে। তাহলে তিনি এ সমস্যা সামাল দিতেই ব্যস্ত থাকবেন। অন্যদিকে মনোযোগ দেয়ার সময় পাবেন না।

বিশাখাপত্তম থেকে জ্যোতিমুখো নামে একজন বাংলাদেশকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন, পকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে ভারত যেভাবে কড়াকড়ি আরোপ করে থাকে, সেভাবে বাংলাদেশকেও বিবেচনা করতে হবে। আর আসামে মুসলমানদের সঙ্গে কাশ্মীরের মুসলমানদের মতোই আচরণ করতে হবে। তবে তিনি লিখেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে এ কাজ আরও সহজ হবে। গোবিন্দ লিখেছেন, ইসরাইলের মতোই ভারতও চারদিকে মোল্লাতন্ত্র শাসিত দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। এসব প্রতিবেশীকে বাদ দিয়ে ভারতকে সেসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, যাদের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐক্য রয়েছে।

 

Thursday, July 26, 2012

হুমায়ূন মার্ডার- ঘাতক শাওন ও মাজহারুল ॥ নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার অনুসন্ধান

গতকাল নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকায় লেখা হয়েছে ড. হুমায়ূন আহমেদ ক্যানসারে মারা যাননি। 

রক্তের সংক্রমণই তার অকাল মৃত্যুর কারণ। বাসায় ফেরার একদিন পর তিনি চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে না নিয়ে জননন্দিত এই ব্যক্তিত্বকে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় একদিন পর নেয়া হয় জ্যামাইকার কুইন্স মেডিকেল সেন্টারে। এরপরই যত জটিলতা। তার এই  অকাল মৃত্যুকে হত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অথচ ওই হাসপাতালটিতে হুমায়ূনের চিকিৎসা বা অপারেশন করা হয়নি। এ ছাড়াও নিউইয়র্কে হুমায়ূনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যভাবে রাখা হয় রহস্যজনক কারণে। হুমায়ূনের এ অকাল মৃত্যুকে হত্যার সঙ্গে তুলনা করেছে পত্রিকাটি। এ জন্য দায়ী করা হয়েছে শাওন ও মাজহারুলকে।

জানা গেছে, লেখক হুমায়ূন আহমেদের লাশ গোসল করানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে লাশের গোসল নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তিকে হেস্তনেস্ত হতে হয়েছে। অন্যের সাহায্য নিতে হয়েছে গোসল করানোর কাজে। ফিউনারেল হোমে হুমায়ূন আহমেদের লাশ পড়েছিল একা, অনাদরে অবহেলায়।

মাতমে অস্থির কাউকে তখন দেখা যায়নি প্রিয় ব্যক্তির কফিনের পাশে। আত্মীয় জামাল আবেদীন ও আনিসুর রহমান ছাড়া কেউ নেই। সাধারণত কেউ মারা গেলে লাশের পাশে সার্বক্ষণিক কাউকে রাখা হয়। দোয়া-কালাম পড়া হয় আত্মার শান্তি কামনা করে। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের লাশের পাশে কেউ না থাকায় গোসলের পর মাত্র চার ব্যক্তিকে প্রথম মোনাজাত করতে হলো।

এসব নিয়ে এখন হাজারও প্রশ্ন সাধারণের মনে। কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের মণি হুমায়ূন আহমেদ কেন এমন উপেক্ষার শিকার হলেন এর জবাব চান তার ভক্তরা। এ বিষয়ে জানতে গিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রমতে, গত ১২ জুন বেলভিউ হাসপাতালে অপারেশন হয় হুমায়ূন আহমেদের। অপারেশনের পর সবাই খুশি। চিকিৎসকরা বললেন, এটা ১০০% সফল অস্ত্রোপচার। মাত্র ৮ দিনের মাথায় ২০ জুন হুমায়ূন আহমেদকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হলে তিনি নিজেই পায়ে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে চড়ে ওজনপার্কের ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসেন।

সূত্রমতে, বাড়ি ফেরার দিনই একটি পার্টি করা হয় হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে। সেখানে সব ধরনের গোশতসহ পানীয় ছিল। ক্যানসার অপারেশনের একজন রোগীকে এসব খাবার দেয়া সঠিক হয়েছে কি না তা নিয়ে রয়েছে অনেকের প্রশ্ন।

২১ জুন দুপুরে হুমায়ূন আহমেদ চেয়ার থেকে পড়ে যান। এটাই হয়েছিল তার জন্য বড় কাল। চেয়ার থেকে কীভাবে তিনি পড়লেন এটা কেউ জানেন না। পড়ে যাওয়ার কারণে অপারেশনস্থল আঘাতপ্রাপ্ত হয় মারাত্মকভাবে। এ নিয়ে সার্বক্ষণিক সঙ্গীরা কোনো ব্যবস্থা নেননি তাৎক্ষণিকভাবে। একদিন পর ব্যথায় কুকরে ওঠেন হুমায়ূন আহমেদ।

এ সময় মুক্তধারার প্রধান বিশ্বজিৎকে ফোন করেন শাওন। জানতে চান ডাক্তারের ফোন নম্বর। বিস্ময়কর বিষয় হলো, শাওন ও মাজহারুল ইসলামের কাছে জরুরি প্রয়োজনের জন্য ফোন নম্বরটিও ছিল না ড. হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসকের।

পরদিন অর্থাৎ ২২ জুন বিকেলে যখন ব্যথা চরম আকার ধারণ করে তখন একটি প্রাইভেট কারে করে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তারা রওনা হন হাসপাতালের দিকে। গাড়িতেই তিনি সংজ্ঞা হারান। একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলে সংজ্ঞাহীন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে যাওয়া হয় জ্যামাইকায় অবস্থিত কুইন্স মেডিকেল সেন্টারের ইমারজেন্সি রুমে।

অবস্থা বেগতিক দেখে শেষে তাকে বেলভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রাতে লেখককে নিয়ে যাওয়া হয় বেলভিউতে। সেখানে যাওয়ার পরপরই অবস্থার ভয়াবহতা দেখে চিকিৎসকরা তাকে আবার অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন ২৩ জুন। এরই মধ্যে ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।

সূত্র জানায়, হুমায়ূন আহমেদ মারাত্মক ইনফেকশনে আক্রান্ত হলেও সব সময়ই এটাকে ঢেকে রাখার একটি প্রবণতা ছিল। এ নিয়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে হাজারও প্রশ্ন।প্রশ্ন উঠেছে, ১২ জুন যখন বেলভিউতে হুমায়ূন আহমেদের অপারেশন হচ্ছিল তখন তার স্ত্রী শাওন ও মাজহারের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে। ড. হুমায়ূন আহমেদের দীর্ঘ অপারেশনের সময় সেখানে উপস্থিত ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, বিশ্বজিৎ সাহাসহ আরো অনেকে ছিলেন উদ্বিগ্ন। বসে বসে তারা মনিটরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন লেখকের সর্বশেষ অবস্থার খবর। 

কিন্তু শাওন ও মাজহার বেরিয়ে যান। তারা ফিরে আসেন প্রায় দুই ঘণ্টা পর।

উপস্থিত শুভানুধ্যায়ীরা বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করেননি।একটি সূত্রমতে, ড. হুমায়ূন আহমেদ বাসায় পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু একদিন পরে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় রক্তে সংক্রমণ, যা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে তার মৃত্যুর কারণ। 

এ গাফিলতির দায়ভার কে নেবে এটাই এখন প্রশ্ন।

বাংলা সাহিত্যের স্রোতধারায় পরিবর্তনের নায়ক হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত এ ভালোবাসার মহানায়ক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হলেন। বিশ্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসার জন্য খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রে এলেন আরোগ্য হওয়ার প্রত্যাশায়। নিউইয়র্ক আগেও আসা-যাওয়া করেছেন পাঠক নন্দিত এ লেখক। পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সদাচঞ্চল রাখা হুমায়ূন আহমেদ লাশ হয়ে ফিরে গেলেন।

নিউইয়র্ক থেকে গত শনিবার রাতে হুমায়ূন আহমেদের কফিন নিয়ে ফ্লাইট উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গে এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে গেল। নিউইয়র্কের কোনো বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদ আর আসবেন না। প্রবাসী কোনো ভক্ত-পাঠক আর কখনো অটোগ্রাফ চেয়ে আবদার জানাবেন না। জীবনের সব হিসাব চুকিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন হুমায়ূন আহমেদ।

চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে এসে প্রায় ১০ মাস ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। দশ মাস নিউইয়র্কে অনেকটা নীরবেই কেটেছে তার। ক্যানসারের স্পর্শকাতর চিকিৎসার কারণেই নিয়ন্ত্রিত ছিল তার চলাচল। বাংলাদেশি অধ্যুষিত নিউইয়র্কের কুইন্সে ঘর ভাড়া করে চিকিৎসা চলছিল। নির্বিঘœ চিকিৎসা অব্যাহত রাখার জন্যই প্রবাসীদের পক্ষ থেকে অহেতুক বিব্রত করা হয়নি প্রয়াত লেখককে। প্রবাসীদের সব আড্ডা-সমাবেশে হুমায়ূন আহমেদের প্রসঙ্গ এসেছে। সবাই কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেছেন প্রিয় লেখক যেন সেরে ওঠেন। যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।

সব শুভ কামনা ধুলায় মিশে যায়। ১৯ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুমায়ূন আহমেদ। পাঠকের মনোজগৎ নিয়ে বহু রহস্য সৃষ্টি করে গেছেন ক্ষণজন্মা এ শব্দের কারিগর। মৃত্যুর আগে ও পরে নিউইয়র্কেও তাকে নিয়ে বেশ কিছু রহস্য, বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বদল বিখ্যাত ক্লোন ক্যাটারিং মেমোরিয়েল হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের।

শারীরিক অবস্থার উন্নতিও ঘটেছিল।

ক্যানসার চিকিৎসার জন্য অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্লোন ক্যাটারিং মেমোরিয়েল হাসপাতাল। হঠাৎ করেই জানা গেল বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। বেলভিউর কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে পরিচিতি নেই। এখানেই তার অস্ত্রোপচার হলো। অস্ত্রোপচারের আট দিনের মাথায় বাড়ি ফিরলেন হুমায়ূন আহমেদ। 

বাড়িতে শরীরের অবস্থার হঠাৎ অবনতি ঘটে।

জ্যামাইকা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হয়ে আবার বেলভিউ হাসপাতালে গেলেন এবং টানা প্রায় চার সপ্তাহ ওখানে থেকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।অনেকেরই জিজ্ঞাসা, হাসপাতাল পরিবর্তন করা হলো কেন? লোকজন জানতে চেয়েছেন, কারণটা কী ছিল অর্থনৈতিক?

বলা হচ্ছে ক্যানসারের আক্রমণে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু ঘটেনি। ঘটেছে অজানা ভাইরাসের আক্রমণে। এ আক্রমণটা ঘটল কোথায়? হাসপাতালে না নিজের ঘরে? ক্যানসার চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর জন্য প্রযোজ্য দেখাশোনায় হুমায়ূন আহমেদের বেলায় কোথাও কোনো অবহেলা হয়েছে কী?

নিউইয়র্কে কে ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের অভিভাবক?

হুমায়ূন আহমেদ কোনো সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর জানার জন্য উদ্বিগ্ন থেকেছে বাংলাদেশের লক্ষ্য কোটি মানুষ। চিকিৎসার জন্য লেখকের সঙ্গে আসা প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম ছিলেন সার্বক্ষণিক। নিউইয়র্কে অবস্থানকালীন চিকিৎসা থেকে নানা বিষয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছেন মুক্তধারার বিশ্বজিৎ সাহা। লেখকের শারীরিক অবস্থা জানার জন্য এ দুজনের ওপরই সংবাদকর্মীদের নির্ভর করতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দুজনের দেয়া ভাষ্যে ফারাক ছিল বিস্তর।

প্রিয় লেখকের সংকটজনক শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে হিমশিম খেতে হয়েছে সংবাদকর্মীদের। অনেকেই বলেছেন, ১৯ জুলাই সকাল পর্যন্ত মাজহারুল ইসলাম লেখকের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেননি। অনেকেরই জিজ্ঞাসা, কোথাও কী কিছু আড়াল করার চেষ্টা ছিল?

আমাদের ব্যর্থতা নিউইয়র্কের বাংলা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন ঢাকা থেকে।

সংবাদ প্রচার হওয়ার পরও দ্রুত নিউইয়র্কের বাংলা সংবাদপত্রের কর্মীরা হাসপাতালে উপস্থিত হতে পারেননি। হাসপাতালের ভেতর থেকে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন এবং মাজহারুল ইসলাম নিউইয়র্কের সংবাদকর্মীদের নয়, ঢাকায় ফোন করে সংবাদ দিচ্ছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদকে হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পাঁচ ঘণ্টা পর ফিউনারেল হোমে পাঠানো হয়। এ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সংবাদকর্মীরা ছাড়া মাত্র তিনজন সাধারণ প্রবাসীকে হাসপাতালের গেটে ভিড় করতে দেখা গেছে।

জ্যামাইকার রকওয়ে বুলেভারের ইসলামিক ফিউনারেল হোমে রাখা হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। 

বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম রোজার প্রস্তুতি এবং তার জানাজার ব্যস্ততা ছিল, ফিউনারেল হোমের মূল ফটকসহ কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল।

রাত ১২টা পর্যন্ত ফিউনারেল হোমে কোনো প্রবাসীকে ছুটে আসতে দেখা যায়নি।

জ্যামাইকার রকওয়ে বুলেভার এবং ১১৬ স্ট্রিটের ঘরে হুমায়ূন আহমেদের পরিবার ছিলেন। সেখানে মধ্যরাত পর্যন্ত মাত্র জন বিশেক মানুষের আগমন ঘটেছে।শুক্রবার সকালে ফিউনারেল হোমে মরদেহ দেখার ব্যবস্থা থাকলেও কোনো প্রবাসী বাংলাদেশিকে সেখানে দেখা যায়নি। শুক্রবার জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের জানাজায় লোকসমাগম নিয়েও কথা উঠেছে।

রমজানের প্রথম জুমার নামাজে একই ধরনের লোকসমাগম হয়ে থাকে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। 

জানাজার পর মরহুমের কফিন দর্শনার্থীদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না।

জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জানাজার পর কোনো শুভেচ্ছার আয়োজন দেখা যায়নি। যেসব সংগঠন, সমিতির নেতারা অহরহ বিবৃতি দিয়ে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানান, তাদেরও দেখা যায়নি। বহু ফুল ফোটানোর মহানায়ক হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ শনিবার দুপুর পর্যন্ত ছিল ফিউনারেল হোমে। প্রবাসী বাংলাদেশি কোনো সংগঠন, নেতা-পাতি নেতাদের সেখানে ফুলের তোড়া নিয়ে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।

যেসব বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক যোদ্ধা, লেখকের আত্মার আত্মীয় বলে পরিচয় ছিল তাদেরও দেখা মিলেনি। 

শনিবার রাতে জনাবিশেক লোক ছিলেন জেএফকে বিমানবন্দরে।যারা এখন শোকসভার ডাক দেবেন, ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কথা লিখবেন, তাদের টিকিটিও চোখে পড়েনি হাসপাতাল থেকে ফিউনারেল হোম পর্যন্ত। ফিউনারেল হোম থেকে অস্থায়ী বাড়ি, জানাজা এবং শেষ বিদায়ে জেএফকেতে।

বিমানবন্দরে কমিউনিটির উপস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া ছিল লজ্জাজনকঅনেকেই জানতে চেয়েছেন, প্রিয় লেখককে কেন বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল? নানা কারণে সভা-সমিতি করে যারা নিজেদের মোড়লত্ব জাহির করেন তারাই বা কেন এগিয়ে গেলেন না? যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী দাবি করেন, কুঁজো হয়ে হাঁটেন তারাই বা কোথায় ছিলেন?

নিয়ন্ত্রণহীন অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই শেষ দেখা দেখতে পারেননি প্রিয় লেখকের প্রিয়মুখ। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো সমন্বয় ছিল না।

জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছেন ওয়াশিংটনের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন।অব্যবস্থাপনা ছিল ফিউনারেল হোমেও শুক্রবার সকাল ৯টায় ইসলামিক ফিউনারেল হোমে গিয়ে মরহুম লেখকের কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি।

 ফিউনারেল হোমের পরিচালক ব্রুস বেইটস জানান, মরদেহ গোসল করানোর জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করছেন। সকাল সোয়া ১০টায় জামাল আবেদীন ও আনিসুর রহমান ফিউনারেল হোমে উপস্থিত হন।

দুজনই মরহুম লেখকের একান্ত স্বজন, প্রথমপক্ষের স্ত্রী গুলতেকিনের নিকট আত্মীয়। অন্য কারো জন্য অপেক্ষা না করে মরদেহ গোসল এবং ধর্মীয়ভাবে প্রস্তুত করা হয়। ধর্মীয় নিয়ম-কানুন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলেও প্রিয় লেখকের এ অন্তিম পর্বে আমিও যোগ দেই। নিয়মানুযায়ী সাদা কাফনের শেষ পরিচ্ছদে মুড়িয়ে দেয়া হয় মরহুমের দেহ।

ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া মরদেহ গোসল করানোর আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। ফিউনারেল হোমের উন্মুক্ত টেবিলে চিরচেনা লেখকের নিথর দেহ দেখে মুষড়ে পড়ার অবস্থা। আমার থর থর কাঁপ এবং অঝোর কান্না দেখে জামাল আবেদীন আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন। আমরা তিনজন তখন দোয়া-দরুদ পড়ছিলাম। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই মরদেহ কফিনে রেখে দেয়া হয়। ফিউনারেল হোমে পারিবারিক দর্শনার্থী ফিউনারেল হোমে পারিবারিক দর্শনার্থীদের জন্য কফিনে রাখা হলেও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনো স্বজন বা পরিবারের লোকজন আসেননি। এখানে একটি প্রার্থনা কক্ষ থাকলেও ধর্মীয় কোনো আয়োজনও ছিল না ফিউনারেল হোমে। মরহুম লেখকের জন্য ছিল না কোনো দোয়া কালামের ব্যবস্থা।

হলরুমে কফিনের মধ্যে লাশ পড়ে আছে একটা। কেউ নেই কিছু বলার। আমরা মাত্র চারজন বসে আছি। 

এরই মধ্যে ফিউনারেল হোমে পৌঁছে গোছেন বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের। নীরব নিথর হুমায়ূন আহমেদের কফিন পড়ে আছে। কেউ নেই দেখার। আমরা চারজন পাশে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম দোয়া-দরুদ করার। তারপর তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রথম মোনাজাত করি আমরাই। কেউ নেই। 

তাই শেষ পর্যন্ত বাংলা পত্রিকা সম্পাদক আবু তাহেরকে অনুরোধ করা হয় মোনাজাত পরিচালনার জন্য। 

মাত্র চারজন মিলে আমরা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করি।

বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পর হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন তার মা তহুরা আলী, দুই পুত্র নিনিত ও নিশাদকে নিয়ে ফিউনারেল হোমে পৌঁছেন।মেহের আফরোজ শাওন মরহুম হুমায়ূন আহমেদের কফিনে ধরে বিলাপ করতে থাকেন ‘জিম জিম-তুমি চলে গেলে/তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো কিভাবে’। 

হুমায়ূন আহমেদকে সম্ভবত ‘জিম’ নামেই ডাকেন তার স্ত্রী শাওন।

শাওন বলছিলেন, ‘জিম তুমি বলতে কুসুম আমার চোখ বুলিয়ে দাও (শাওনকে হুমায়ূন আহমেদ ‘কুসুম’ বলেই ডাকতেন)’। শাওন বলেন, ‘দেখো জিম, আমি তোমার চোখ বুলিয়ে দিচ্ছি।’ শাওন বিলাপ করতে থাকেন, ‘জিম আমি রাখতে পারলাম না।’ এ সময় শাওনের মা তহুরা আলী মেয়েকে সান্ত¡না দিয়ে বলছিলেন, ‘দুই সন্তানের জন্যই তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। মন শান্ত করো মা।’

নিশাদ ও নিনিত দুই সন্তান নিশাদ ও নিনিত শেষ দেখা দেখেছে ওদের বাবা কোটি জনতার প্রিয় মানুষ হুমায়ূন আহমেদকে। ফিউনারেল হোমে মা ও নানীর সঙ্গে নিয়ে এলে তারা শুধু দেখছিল। বাবাকে ‘বাই বলো, বাবার কাছ থেকে বিদায় নাও’বলছিলেন মা মেহের আফরোজ শাওন। পলকহীন অবুঝ দুই শিশুপুত্র তখন কেবল এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল।
ছবি ওঠানো বারণ

হুমায়ূন আহমেদের কফিনে বিলাপরত তার স্ত্রী ও স্বজনদের ছবি গ্রহণের উদ্যোগ নেই। ফিউনারেল হোমের পরিচালকের কাছ থেকে প্রথম জেনে নেই ছবি তুলতে কোনো বাধা আছে কি না। ক্যামেরায় ছবি ধারণ করতেই ক্ষুব্ধ মেহের আফরোজ শাওন ছুটে এসে আমার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। তার মা তহুরা আলী উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ নিষেধ করে গেছেন কোনো ছবি যেন ওঠানো না হয়।’ প্রয়াত লেখকের নিষেধের কথা আমার জানা নেই বলে তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করা হয়। ধারণ করা সব ছবি মুছে ফেলে আমার ক্যামেরা ফেরত দেয়া হয়।

অসুস্থ অবস্থায় প্রয়াত লেখকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকা মুক্তধারার বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, ছবি ওঠানোর ব্যাপারে নিষেধের কথা হুমায়ূন আহমেদ বলে যাননি। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে থেকেই তো তিনি কিছু বলতে পারছিলেন না।

মরদেহ ফিউনারেল হোমে রেখে অপ্রীতিকর আচরণ মাত্র সাতজন পারিবারিক দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল থাকার জন্য বলছিলেন সকাল থেকে ফিউনারেল হোমে উপস্থিত জয়নাল আবদীন। তার দিকে হঠাৎ তেড়ে আসেন প্রয়াত লেখকের বন্ধু বলে পরিচিত ফানসু ম-ল। স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে আসা ফানসু ম-ল এবং জয়নাল আবেদীনের মধ্যে ‘তুমি কে, তা আমি দেখে নেবো’ ইত্যাদি বাক্যবিনিময় শুরু হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ফিউনারেল হোম কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। মরদেহ দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জানাজা শেষ হওয়ার পরও মরহুম দেশে ফেরার সময় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসা করা হলে সবাই বলছিলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চলছে, শুক্রবার রাতেই যেন ফ্লাইট ধরানো যায়। সমন্বয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মুক্তধারার বিশ্বজিৎ সাহা জানান, কার্যত সব টিকিট প্রথম শ্রেণীর না পাওয়ায় বিলম্ব হচ্ছিল।

মরদেহের সঙ্গে যারা ঢাকা যাবেন তারা নাকি প্রথম শ্রেণী ছাড়া ভ্রমণ করবেন না। অথচ হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই ড. জাফর ইকবাল ইকোনমি ক্লাসে ওইদিন ঢাকার উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন।

জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ তখন ফিউনারেল হোমের হিমাগারে। জীবদ্দশায় তার ভ্রমণে প্রথম শ্রেণীর চাহিদা সবসময় ছিল কি না জানি না। তবে লাখো জনতার অপেক্ষা ও উৎকণ্ঠায় স্বদেশ তখন প্রিয় লেখকের কফিনের অপেক্ষায়।

Tuesday, July 24, 2012

শাওনের বক্তব্য নিয়ে নিউ ইয়র্কে তোলপাড়

হুমায়ন আহমেদ তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফনের কথা বলে গেছেন, মেহের আফরোজ শাওনের এমন বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাদের ঘনিষ্ঠ নিউ ইয়র্ক প্রবাসী কয়েকজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আব্দুল মোমেনের স্ত্রী সেলিনা মোমেন শাওনের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, শনিবার হুমায়ন আহমেদের মরদেহ দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে জেএফকে এয়ারপোর্টে প্রকাশ্যে মেহের আফরোজ শাওন লাশ দাফনের ব্যাপারে হুমায়ুন আহমেদ কিছু বলে যাননি বলে জানান।

সেলিনা মোমেন বলেন, শাওনকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেখানে আমি, হুমায়ুন আহমেদের চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্ঠ মুক্তধারা নিউইয়র্কের প্রধান বিশ্বজিৎ সাহা, তার স্ত্রী রুমা সাহা এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সাবেক চীফ রিপোর্টার ও ইটিিিভর নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি শাখাওয়াত হোসেন সেলিম উপস্থিত ছিলেন।

সবার সামনেই তাকে লাশ দাফনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শাওন বলেন, হুমায়ুন আহমেদ এবিষয়ে কিছুই বলে যাননি। এজন্য দেশে গিয়েই সিদ্ধান্ত হবে।

এবিষয়ে সাংবাদিক শাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, শাওন বললেন, হুমায়ুন আহমেদ কিছু বলে যাননি। তাই তিনি বলতে পারছেন না দাফন কোথায় হবে। তার এ্ই কথা রেকর্ড করতে গেলেই বাঁধা দেন শাওনের মা তহুরা আলী। তিনি বলেন, এখন কোন কথা রেকর্ড করা যাবে না। শাওনকে তিনি বারণ করেন এবিষয়ে কোন কথা না বলতে।

এবিষয়ে হুমায়ুন আহমেদের চিকিৎসার সাথে জড়িত প্রধান ব্যক্তি বিশ্বজিৎ সাহার বত্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাওনের বক্তব্য আমাকে বিস্মিত ও স্থম্ভিত করেছে। কারণ এয়ারপোর্টে তিনি প্রকাশ্যে বললেন, লাশ দাফনের বিষয়ে হুমায়ুন আহমেদ কিছুই বলে যাননি। কিন্তু দেশে গিয়েই তিনি একেবারেই উল্টো কথা বললেন।

গত ৯ মাস আমরা চিকিৎসার স্বার্থে কাছাকাছি ছিলাম। কিন্তু শাওন এধরনের কথা কখনো বলেনি। ড. হুমায়ুন আহমেদও আমাদের দাফন নিয়ে কোন নির্দেশনা দেননি।

বিশ্বজিৎ সাহার স্ত্রী রুমা সাহা বলেন, আমরা স্যারের মরদেহ ও শাওনকে বিদায় দিতে এয়ারপোর্ট গেলাম। সেখানে শাওন সবার সামনেই বলেছেন, স্যার দাফনের বিষয়ে কোন কিছু বলে যাননি। এখন তিনি একেবারেই অন্য কথা বলছেন। অবশ্য এ সময় তার মা তহুরা আলী এসে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিয়ে যান বলে জানান। 

 

Saturday, May 19, 2012

জনতাকে লক্ষ্য করে এমপি গিয়াস উদ্দিনের গুলি

বিক্ষুব্ধ দলীয় সমর্থক ও এলাকাবাসী ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের সাংসদের গাড়ি ভাংচুর করলে এমপি ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেন। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের কান্দিপাড়া বাজারে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় গফরগাঁও-টোক সড়ক দিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ঢাকা থেকে গফরগাঁও উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে কান্দিপাড়া বাজারে গাড়ি থামিয়ে দলীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এমপি কান্দিপাড়া এসেছেন_ এ খবর শুনে মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত হয় শত শত দলীয় ও স্থানীয় লোকজন। তারা এমপিকে ঘেরাও করে। সদ্য ঘোষিত পাগলা থানার স্থান পরিবর্তনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে তারা। এ অবস্থায় এমপি গাড়ির গল্গাস খুলে উপস্থিত লোকজনকে ধমকান এবং গালাগাল করেন। এতে লোকজন উত্তেজিত হয়ে এমপির গাড়ির পেছনের গ্গ্নাস ভাংচুর করে। তখন ক্ষুব্ধ এমপি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ গাড়ির জানালা দিয়ে নিজস্ব পিস্তল থেকে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে গুলি করেন। এতে লোকজন আরও উত্তেজিত হয়ে ফের এমপির গাড়ি ভাংচুর করে। এ অবস্থায় তিনি গাড়ি থেকে নেমে লোকজনকে লক্ষ্য করে আবারও গুলি করেন। পরে স্থানীয় মুরবি্বরা এগিয়ে এসে ঘটনা সামাল দেন। সেখান থেকে এমপি গিয়াস উদ্দিন উপজেলা সদরের সরকারি ডাকবাংলোতে অবস্থান নেন। অন্যদিকে এমপির গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক কান্দিপাড়া বাজারে দলীয় ও স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় আতঙ্কে বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ১২টায় কান্দিপাড়া বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উস্থি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শফিউল বাশার মনি জানান, 'সদ্য ঘোষিত পাগলা থানার স্থান পরিবর্তনের দাবিতে পাঁচ ইউনিয়নের লোকজন আন্দোলন করছে। এমপি সাহেব এ আন্দোলনে কোনো কর্ণপাত না করায় এ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে।' অপরদিকে এমপি সমর্থিত লংগাইর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী মণ্ডল সমকালকে বলেন, 'সন্ত্রাসীরা এমপিকে হত্যা করার জন্য তার গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে।' তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ৯টায় স্থানীয় বাজারে এক প্রতিবাদ সভা হয়। গফরগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ কর্মী সিদ্দিকুর রহমান রাসেল বলেন, 'এমপি সাহেব গাড়িতে বসে এবং গাড়ি থেকে নেমে দু'বার গুলি করেন।'

পরে এমপি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ উপজেলা সদরের ডাকবাংলোয় অবস্থান নিয়ে তার দলীয় সমর্থকদের জড়ো করেন। রাত ৯টায় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বাবুলের নেতৃত্বে ২০-৩০টি মোটরসাইকেল বহর সশস্ত্র অবস্থায় কান্দিপাড়া বাজারে যায় এবং কান্দিপাড়া বাজার চৌরাস্তায় সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা করে। এতে বক্তব্য দেন মতিউর রহমান বাবুল, লিয়াকত আলী মণ্ডল, মোফাজ্জল হোসেন সাগর, মাহতাব উদ্দিন সাদেক প্রমুখ। অন্যদিকে রাত সাড়ে ৯টায় সতরবাড়ি বাজারে এমপির সমর্থকরা লংগাইর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এম হককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেল্গক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন পথচারীকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলো_ বকুল মিয়া, তানজিব ও কামরুল। এ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, 'আমি ঢাকা থেকে গফরগাঁও যাওয়ার পথে কান্দিপাড়া বাজারে একটি পথসভা করি। পথসভা শেষে গফরগাঁও ফেরার পথে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। এ সময় আমি ফাঁকা গুলি করলে তারা পালিয়ে যায়।'

এলাকাবাসী জানান, এলাকার উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি, ভিজিএফ কার্ড বিতরণ, পরিবহনে চাঁদাবাজি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগসহ সবকিছু এমপির একক নিয়ন্ত্রণে। খোদ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এমপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ তুলেছেন। ডাকবাংলো, রেলওয়ে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখলের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এসব নানা জনবিরোধী তৎপরতার কারণে এলাকার একটি বড় অংশ এমপির ওপর ক্ষুব্ধ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমপি হওয়ার পর এলাকার জন্য তেমন কোনো উন্নয়ন কাজ করেননি গিয়াস উদ্দিন। এমপির বিরুদ্ধে কথা বললেই হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতারাও। এমপি গিয়াসউদ্দিন অবশ্য দাবি করে আসছেন, তিনি দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলেন না। 

Tuesday, May 1, 2012

ইলিয়াসের স্ত্রীর প্রতি শ্রম প্রতিমন্ত্রী আপনার স্বামীর খুনি কে প্রধানমন্ত্রীকে খুলে বলুন (ভিডিও)

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, ‘ইলিয়াসের বিধবা স্ত্রী জানেন, তাঁর স্বামীর প্রকৃত খুনি কে।’ ‘আপনার স্বামীর খুনি কে’ তা প্রধানমন্ত্রীকে খুলে বলার জন্য ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার সকালে ওসমানী মিলনায়তনে মে দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তিনি এ কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানটি টিভি ও রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

মন্নুজান বলেন, ‘ইলিয়াসের বিধবা স্ত্রী যখন টেলিভিশনে কথা বলেন, তখন মনে হয় তিনি অনেক কথা জানেন, কিন্তু বলতে পারছেন না।’ ইলিয়াসের স্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি জানেন, আপনার স্বামীর খুনি কে, কারা তাঁকে অপহরণ করেছিল। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তিনি কোনো দিন এ কাজ করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে ডেকেছেন, তাঁর কাছে সব খুলে বলুন। আশা করি, আপনার স্বামীর খুনিরা ধরা পড়বে।’

শ্রম প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সময় মিলনায়তনের ভেতরে প্রথম সারিতে বসে থাকা সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের কানাকানি করতে দেখা যায়।

মন্নুজান সুফিয়ান আরও বলেন, নিজামী-মুজাহিদদের টাকা দিয়ে হরতাল করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা নেতা-কর্মীর হাতে এক-দেড় হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে মাঠে আনা হচ্ছে। তিনি হরতালের আগের দিন বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুড়ে মারা যাওয়া চালক বদর বেগের হত্যার বিচার দাবি করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় খালেদা জিয়া পাকিস্তানিদের মেহমান ছিলেন। তাই এখন তিনি দেশের উন্নয়ন চান না। সচিবালয়ে বোমা মারেন, গাড়ি পোড়ান।


Saturday, April 28, 2012

সেই হারুন এখন এসপি : বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে মারধর করায় পদোন্নতি!

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে মেধাতালিকায় ৮৭তম অবস্থানে আছেন। ৪৩ জনকে ডিঙিয়ে তিনি পেয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের চলতি দায়িত্ব। তাঁর পরের ব্যক্তি পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মনিরুজ্জামান। ৪৪ জনকে ডিঙিয়ে তাঁকে লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপারের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।


অভিযোগ উঠেছে, এভাবে অনিয়ম ও দলীয়করণের মাধ্যমে ৩৬ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপারের চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তার অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও আছে। কেউ কেউ সাময়িক বরখাস্ত হন।


এখন চলতি দায়িত্বে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা পরে পুলিশ সুপারের পদে স্থায়ী নিয়োগ পাবেন। এ কারণে এ ধরনের পদায়নকে পদোন্নতি হিসেবে ধরা হয়।


অভিযোগ আছে, হারুন অর রশিদ তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার থাকার সময় গত বছরের ৬ জুলাই সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে মারধর করেছিলেন। এ ঘটনা ওই সময় গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। ফারুককে মারধর করার ‘পুরস্কার’ হিসেবে ৪৩ জনকে ডিঙিয়ে হারুনকে এসপির পদ দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের মধ্যেই আলোচনা হচ্ছে।


পুলিশ সূত্র জানায়, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে মারধরের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল জলিল এ কমিটির প্রধান। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো তদন্তই হয়নি। এ বিষয়ে কেউ মন্তব্যও করতে চাননি।


হারুন অর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, কিছুদিন আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন। তাঁর ফোন বন্ধ রয়েছে।


২২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ৫৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি ও নিয়োগের আদেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই তালিকায় ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মকর্তা আছেন ৩৬ জন। তাঁদের পদায়নের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, দলীয় বিবেচনায় পছন্দের তালিকা ধরে পদায়ন করা হয়েছে।


পুলিশ সূত্র জানায়, এ নিয়ে এই ব্যাচের ১৭ জন কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁরা হারুনসহ অনেকের পদোন্নতি নিয়ে আপত্তি তোলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, অনিয়মের অভিযোগের কারণে পদোন্নতির তালিকাটি এক দফা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর দীর্ঘদিন এটি ঝুলে ছিল। পরে কয়েকজন কর্মকর্তা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি বাড়ি ঘুরে নিজেদের পছন্দের নাম যুক্ত করেন।


পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে সব সময় অভিযোগ ওঠে। এটা নতুন কিছু নয়। পদোন্নতির জন্য একটি কমিটি আছে, সেই কমিটিই সব ঠিক করে। এবার কিছু কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন, আগামীতে তাঁরা পদোন্নতি পাবেন। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।’


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবারের পদায়ন নিয়ে পুলিশ বিভাগে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর আগে এত অনিয়ম হয়নি। পদোন্নতি পাওয়া দুই কর্মকর্তা সম্প্রতি সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে যান। 

তাঁদের সঙ্গে পদোন্নতিবঞ্চিত এক কর্মকর্তাও ছিলেন। তাঁরা বলেন, ৩৬ জনকে পদায়ন করা হলেও মেধাতালিকায় চতুর্থ আনিছুর রহমান ও পঞ্চম বরকতুল্লাহ খানকে পদায়ন করা হয়নি। বরকতুল্লাহ বিগত সরকারের সময়ও বঞ্চিত ছিলেন। অভিযোগ শুনে ওই পদস্থ কর্মকর্তা নিজেও হতবাক হয়ে বলেন, বরকতুল্লাহর নাম তালিকায় ছিল। কিন্তু কেন শেষ মুহূর্তে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা তিনি জানেন না।


ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ নুরুল ইসলাম মেধা তালিকায় ৬৫তম অবস্থানে আছেন। ৩৫ জনকে ডিঙিয়ে তাঁকে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আরেক নেতা মনিরুজ্জামানকে একইভাবে পদায়ন করা হয়েছে।


দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে। তবু তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এসপির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় মামলা চলছে এ কে এম এহসান উল্লাহর বিরুদ্ধেও। তাঁকে হাইওয়ে পুলিশের (পশ্চিম) পুলিশ সুপার পদে (চলতি দায়িত্ব) পদায়ন করা হয়েছে।


যোগাযোগ করা হলে সাবেক আইজিপি এ এস এম শাহজাহান বলেন, পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি মেধার ভিত্তিতে করতে হবে। তা না হলে ভালো পুলিশ গড়ে উঠবে না। দলীয় পরিচয় পদোন্নতির মাপকাঠি হলে পুলিশের সংস্কার আর কোনো দিনই হবে না।

Sunday, April 22, 2012

তিন শর্তে ইলিয়াসের মুক্তি!

তিন শর্ত মানলে ইলিয়াস আলীকে ছেড়ে দেয়া হবে- এই খবরটি ছিল রাজনৈতিক মহলের উচ্চ পর্যায়ের সর্বত্র আলোচনার বিষয়। শর্ত তিনটি হলো: এক. সুরঞ্জিতের এপিএসের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ড্রাইভার আলী আজমকে দিয়ে ঘটিয়েছেন ইলিয়াস আলী। দুই. বলতে হবে তার নিজের দলের লোকেরাই তাকে অপহরণ করেছে। তিন. তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন না। এই খবর দিয়েছে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

শনিবার গাজীপুরের পুবাইলে ইলিয়াসের সন্ধানে র্যাব-পুলিশের অভিযান চালায়। তারা একটি শ্যুটিং স্পটের বাড়িতে এই অভিযান পরিচালনা করে। সূত্র জানায়, এই সময় র্যাব-পুলিশের সঙ্গে ছিলেন ইলিয়াসের স্ত্রী তাহমিনা রুশদী। অভিযানশেষে ঢাকায় ফেরার পথে ইলিয়াসের স্ত্রীকে এই তিন শর্তের কথা বলা হয়।

তাহমিনা রুশদী ঢাকায় পৌঁছেই ছুটে যান খালেদা জিয়ার বাসায়। সেখানে তিনি কথা বলেন নেত্রীর সঙ্গে। সূত্র জানাচ্ছে, এই তিন শর্ত নিয়ে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তাহমিনা রুশদী। সূত্র দাবি করেছে, নেত্রী শর্ত মানার কথা বলে দিয়েছেন তাকে। নেত্রীর বক্তব্য হলো, আগে ইলিয়াস বেঁচে আসুক, পরে বাকিটা দেখা যাবে।

এরপর থেকেই তাহমিনা রুশদী আর কারো সাথে কথা বলছেন না। মিডিয়ার সামনেও আসছেন না। ওই সূত্র দাবি করেছে, তিনি র্যাবকে শর্ত মেনে নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এখন তার একটাই প্রতীক্ষা স্বামী কখন ফিরে আসবে।

এই বিষয়ে র্যাবের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এক ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন
তবে ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন কি আসবেন না, এই প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দিনভর আলোচনা চলে। এতো পরিচিত একজন রাজনৈতিক নেতার এভাবে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গোটা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টিতে অনেকে এই গরমেও শিরদাঁড়ায় হিমশীতল আতঙ্ক অনুভব করছেন।

খবর বেরিয়েছে, বিএনপির নেতারা যাতে একা চলাফেরা না করেন সেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। আরো বলা হয়েছে তারা যেন রাত ১০টার পর আর বাইরে না থাকেন। কখন কোথায় নিখোঁজ হন এই আতঙ্কে ভুগছেন দলের নেতারা।

এদিকে পুলিশ বলছে, ইলিয়াসকে খোঁজার চেষ্টা তাদের অব্যাহত আছে। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম মনিরুজ্জামানের আদালতে জমা দেয়া তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ কথা জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদনে প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পর আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। তার স্ত্রী তাহমিনা রুশদী গত বুধবার বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাটির তদন্তের বিষয়ে আবেদন করলে আদালত ওই নির্দেশ দেন।

রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইলিয়াসকে খুঁজে বের করার নামে সরকার নাটক করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ইলিয়াসকে পুঁজি করে বিরোধী দল রাজনীতি করছে। মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, রাজনীতি অশান্ত করতে ইলিয়াস নাটক সাজিয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেছেন, ইলিয়াসকে সরকার সর্বশক্তি দিয়ে উদ্ধার করবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেকে আশার আলো দেখছেন।

সাধারণ মানুষের কথা হলো, ইলিয়াসকে খুঁজে বের করা হোক। আর এই দায়িত্ব সরকারেরই। আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল জলিলও একথাই বলেছেন। শুধু রাজনীতি নয়, গোটা দেশে ইলিয়াসের নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে যে অরাজকতা, অশান্তি ও উৎকণ্ঠার জন্ম হয়েছে তার সমাধান একটাই- ইলিয়াসকে খুঁজে বের করা। সাধারণ মানুষ বলছে, এটা না হওয়া পর্যন্ত অরাজকতার পারদ বাড়তেই থাকবে।

তার লক্ষণও দেখা দিয়েছে। বিএনপি সোমবারও হরতাল ডেকেছে। জানা গেছে, হরতাল যাতে আর না হয় সে লক্ষ্যে সরকার রোববার বড় রকমের কোনো অ্যাকশনে যায়নি। পুলিশের ভূমিকা তাই প্রমাণ করেছে। কিন্তু বিএনপি মানেনি। তারা সোমবারও হরতাল ডেকেছে। এই হরতাল কি আরো বাড়বে? এই প্রশ্নও ওঠছে। বিএনপির মধ্যে একটি গ্রুপ মনে করে, হরতাল চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে ইলিয়াসকে ফিরে পাওয়া যাবে না। তারা বলছে, এইচএসসি পরীক্ষা তো দু’দিন বাতিল হলো। আরো ক’দিন হলে অসুবিধা নেই। এই গ্রুপটি মনে করে ইলিয়াসের ঘটনায় জনগণ ক্ষুব্ধ। কাজেই হরতাল তারা মেনে নেবে।

ইলিয়াস আলীর উদ্ধার যতো দেরি হচ্ছে, ততই নানা গুজব ডালপালা মেলছে। আর এই ধরনের বার্নিং ইস্যুতে এটা হওয়াই স্বাভাবিক বলেই মনে করেন রাজনৈতিক নেতারা।

আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই ইলিয়াসকে খুঁজে বের করার পক্ষে বলে দাবি করেছে দলের একটি সূত্র। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম শনিবার বলেছিলেন, এই ঘটনায় তারা বিব্রত। এমনিতে আওয়ামী লীগের নেতারা রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে এই বিষয়ে যাই বলুন না কেন- তারা ইলিয়াসকে খুঁজে পেতে আন্তরিক বলে দাবি করেছেন দলের একজন নেতা।

বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা এবং একটি দমবন্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারি ও বিরোধীদল উভয়কেই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এর জন্য দুই প্রধান দলের নেতাদের শত্রুতা মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেছেন, ইলিয়াসকে খুঁজে বের করলে পরিবেশ অনেকটাই শান্ত হবে।

সাবেক আইজিপি ড. এনামুল হক বলেছেন, বর্তমান অচলাবস্থা থেকে বের হতে হলে ইলিয়াসকে খুঁজে বের করতেই হবে। তা না হলে ঠিক কী হয় তা নিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।


Wednesday, March 28, 2012

এসব কী চলছে ডিজিটাল দেশে?

শেখ হাসিনার বক্তৃতাটি শুনে চমকে উঠেছি! এশিয়া কাপের ফাইন্যালের দিন মাঠে যদি না যেতেন খালেদা জিয়া! এর আগে মোহাম্মদ নাসিমও রাবিশ বক্তব্য দিয়েছিলেন। গুরুত্ব পায়নি। শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর সেটিকে গুরুত্ব দিতে হয়। কারণ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিরোধীদলের নেত্রী সম্পর্কে তিনি এমন আপত্তিকর বক্তব্য দিতে পারেন না। কারণ সাবজেক্টটা রাজনীতিও না। ক্রিকেটের। দেশের রাজনীতিকরা যা পারেন না, আজকাল ক্রিকেটাররা প্রায়ই তা করে দেখাচ্ছেন। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছেন প্রায়। এশিয়া কাপ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেও ব্যক্তিগত ও দলগত পারফরমেন্সে জাতীয় ক্রিকেটদল সেভাবে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। সে ঐক্যের আহবানে সাড়া দিয়ে বিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়াও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন একটি সুযোগ মিস করেছেন। রাষ্ট্রপতির পাশে সেদিন বিরোধীদলীয় নেত্রীকেও খেলা দেখতে তাদের  পাশে ডেকে নিতে পারতেন। এটি করলে তাতে দেশের মানুষের কাছে তার বড় মনের পরিচয় মিলত। কিন্তু তিনি তা করেন নি। উল্টো বিরোধীদলের নেত্রীকে কটাক্ষ করে বলতে চেয়েছেন, তিনি খেলা দেখতে যাওয়াতেই দল হেরেছে! তা-ও এতে আবার এক্ষেত্রে তার গৃহপরিচারিকার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করা হয়েছে! এটি আমাদের জাতীয় ক্রিকেটদলের পারফরমেন্স ও কৃতি্ত্বকে ছোট করা হয়েছে। একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদনেত্রী হিসাবে বিরোধীদলের নেত্রীকে তিনি এভাবে ছোট করতে, কটাক্ষ করতে পারেন না। এর মধ্য দিয়ে দেশের সংসদকেই ছোট ও কটাক্ষ করা হয়েছে, যা রীতিমতো বিপদজ্জনক।

একটা কথা মাঝে মাঝেই লিখি, শেখ হাসিনাকে এবার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার সময় তার কথাবার্তার ফাইল একটু উল্টে দেখতে বলি। মানুষ সেসব বিনীত কথাবার্তা পছন্দ করেছিল। আজকের দুর্বিনীত কথাবার্তাকে অপছন্দ করছে। মনে করা হয়, এসব দুর্বিনীত কথাবার্তার কারণেই ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসতে পারেন নি।

চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে খোদ বন ও পরিবেশমন্ত্রীর উদ্যোগে দুটি হাতিকে ব্যবহার করা হয়েছে! বার্তাটি মোটেই ডিজিটাল রুচির পরিচায়ক নয়। যে দেশকে ডিজিটাল হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন স্লোগানে ক্ষমতায় আসা একটি দল যে দেশে দোয়েল ল্যাপটপের প্রোডাকশন্স-মার্কেটিং উদ্বোধন করে, সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেশের একটি অঞ্চলে বনের হাতি দিয়ে বরণ করা হয়! তাও আবার সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর উদ্যোগে? বন্যপ্রাণীর ব্যবহার-অপব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন-কানুনও জানেন না এই মন্ত্রী? পরিবেশ সচেতনতার বৈশ্বিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আলগোরের উদ্যোগে অ্যান্টার্কটিকা ঘুরে এসে এই জ্ঞান-সচেতনতাই কী হলো আমাদের ডিজিটাল সরকারের এই মন্ত্রীর? আমাদের শৈশবে ইবনে মিজান, এফ কবীর চৌধুরী, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুদের কথিত সব ফোক-ফ্যান্টাসির পোশাকি ছবিতে আমরা রাজা-বাদশাদের কাল্পনিক গল্পের ছবিতে এসব হাতি-ঘোড়ার ব্যবহার দেখতাম। দুনিয়ার সঙ্গে দেশের মানুষের রূচি বদলের সঙ্গে সেইসব পোশাকি ছবির ধারাও হারিয়ে গেছে। আর আমাদের চলতি ডিজিটাল সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে অভ্যর্থনা জানাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি বা দলের দীর্ঘদিনের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ক্যারিশমাও আর কাজে লাগছে না? সেখানে দরকার হচ্ছে শান্তি রানী ও শেঠ বাহাদুর নামের সাফারি পার্কের দুটি হাতি’র? বার্তাটি ভালো হলো না প্রধানমন্ত্রী!

স্বাধীনতা দিবসে খালেদা জিয়াকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে কেন বাধা হয়েছে? কেন বাধা দেয়া হয়েছে তার হোটেলের প্রোগ্রামে? এর আগে গত বিজয় দিবসেও খালেদা জিয়ার স্মৃতিসৌধে যাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মারপিট হয়েছে। এবার গুলশানের বাড়ি থেকে বেরুবার আগেই তার বহরের সামনে পুলিশ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হলো কেন? এরপর পথে পথে দলীয় গুণ্ডাদের ব্যবহার করা হলো কেন? স্বাধীনতার বিদেশি বন্ধুরা ঢাকা এসে সরেজমিন কী দেখে গেলেন? সচিত্র সন্ধানী আর আশির দশকের যায়যায়দিনের শফিক রেহমান আজ কিসের আশায় কোথায় পোতায়া গেছেন, এটি তার নিজস্ব ব্যাপার। তার মেধা-প্রতিভা তিনি এখন বেগম জিয়ার জীবন গবেষণার নামে টাকা কামাই আর সাংবাদিক ঠকানোয় নিয়োজিত করেছেন, এটি তার ব্যাপার।

আব্দুল গাফফার চৌধুরীর তো একটি মাস্টার পিস ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো’ গান আছে; এটি ছাড়া বাঙ্গালির একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় না। কিন্তু তার (শফিক রেহমানের)সর্বশেষ দেশের শতশত সাংবাদিক ঠকানো ছাড়া কী কীর্তি আছে? দেশের সাংবাদিকরা কী কোনোদিন বিমানবন্দরে শফিক রেহমানের মতো আব্দুল গাফফার চৌধুরীর গতিরোধ করেছেন? সেই শফিক রেহমানের খালেদা জিয়ার জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাধা দিতে গিয়ে তাকে যে আব্দুল গাফফার চৌধুরীদের আক্রমণের সুযোগ করে দেয়া হলো, এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হয়। এখন বই প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হবার পর শফিক রেহমান বলেছেন, আরও খারাপ ভাবে খুন হবেন শেখ হাসিনা! আরও খারাপভাবে বিদায় হবে শেখ হাসিনার সরকারের! আমাদের প্রিয় শফিক ভাই কী এসব পরিকল্পনা আপটুডেট ভালো জানেন, নাকি শ্যাম্পেন একটু বেশি পড়েছিল পেটে? এসব ঘটনা কেন ঘটানো হলো এর সাফ জবাব দিতে হবে সরকারকে। এসব এনালগি আচরণ কিন্তু কোনো ডিজিটাল সরকারের নমুনা নয়। 

Sunday, March 25, 2012

টিপাই বাঁধের পক্ষে দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনারের সাফাই

ভারতের উত্তরপূর্বের মনিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তের বরাক ও তুইপাই নদীর মুখে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য উপকারই হবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহমেদ করিম।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের সংবাদমাধ্যমের জন্য রোববার পাঠানো একটি প্রবন্ধে হাইকমিশনার এ মন্তব্য করেছেন।

কলকাতার বহুল প্রচারিত বাংলা সংবাদপত্র ‘দৈনিক প্রয়াগ’র প্রধান প্রতিবেদক দীপন বন্দোপাধ্যায় হাইকমিশনারের প্রবন্ধটি সম্পর্কে রোববার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানান।

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার এনামুল হক চৌধুরী হাইকমিশনারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি প্রবন্ধ লেখার বিষয়টি বাংলানিউজের কাছে নিশ্চিত করেন।

‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক : এগিয়ে যেতে আমার ভাবনা’ শীর্ষক শিরোনামে ওই প্রবন্ধটিতে হাইকমিশনার লিখেছেন, ‘টিপাইমুখ প্রকল্প আকস্মিভাবে (ক্যাটালিজম) কোনও ক্ষতি করবে না, এটা বাংলাদেশের উপকার করবে।’ 
 
নয়াদিল্লি থেকে প্রেস মিনিস্টার এনামুল বলেন, ‘রোববার সকালে আমি হাইকমিশনারের প্রবন্ধটি ভারতের সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছি।’

টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সিলেটে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হলে টিপাইমুখে বাঁধ করতে দেওয়া হবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিনই নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার বাঁধ নিয়ে এই মন্তব্যে ভারতের গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।

আসামের বাংলা সংবাদপত্র দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুর আহমেদ বড়ভূঁইয়া রোববার টেলিফোনে বাংলানিউজের কাছে হাইকমিশনারের লেখা সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটা খুবই আগ্রহোদ্দীপক বিষয়, যে হাইকমিশনার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন।’

মনজুর বলেন, ‘টিপাইমুখ বাঁধের বিরোধিতা শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং আসামের বরাক উপত্যকার মানুষ এবং খোদ মনিপুর রাজ্যেও হচ্ছে।’

হাইকমিশনার যা লিখেছেন:

‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া রিলেশন: মাই ভিশন অব দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শিরোনামের প্রবন্ধে তারিক আহমেদ করিম বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘অনেকেই টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বিরোধিতা করছেন, কিন্তু আমি মনে করি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আকস্মিকভাবে কোনো ক্ষতি হবে না, বরং এই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ পেতে পারে।’

তিনি আরো লেখেন, ‘টিপাইমুখ হবে একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ, যেখানে একটি নির্দিষ্ট মাপ পর্যন্ত পানি জমা করা হবে এবং পরে সেখান থেকে পানি বেরিয়ে আসবে যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।’

বাঁধ প্রসঙ্গে বিরোধিতাকারীদের বিরোধিতা করে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, ‘বরাক নদীসহ কোনো নদী দিয়েই পানি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া হবে না বা কোনো পানি প্রত্যাহারও করা হবে না।’
 
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু জলবিদ্যুৎই উৎপাদনই নয়, এই প্রকল্প থেকে বন্যাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’

তবে হাইকমিশনার এই প্রকল্পে যৌথ সমীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘একটি যৌথ সমীক্ষা হলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং সবাইকে শান্ত করা যাবে।’ 


Sunday, March 18, 2012

রুনী-সাগর হত্যাকাণ্ড: আদৌ কি তদন্ত চলছে?

১১ ফেব্রুয়ারী, সকাল আটটা। ঘুমের মধ্যেই ফোনটি ধরলাম। অপর প্রান্ত থেকে খুব চেনা একটি কন্ঠস্বর বললো, ‘শুনছেন, সাগর রুনি দুজনই আত্মহত্যা করছে কিংবা ডাকাতি হইছে। 
 
কিছু জানেন নাকি?’ মুহুর্তে চিত্কার করে উঠে বসলাম। ‘প্রভাষ দা? বুঝলাম না আপনার কথা।’ এটিএন নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক প্রভাষ আমীন যা বললেন, তা এমন: মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি-এরা দুজনই মারা গেছেন। তবে সেটি আত্মহত্যা নাকি ডাকাতি নিশ্চিত নয়। আমি অবিশ্বাসের সুরে বললাম, ‘খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাচ্ছি।’ রুনির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচত এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি নাদিরা কিরনকে ফোন করলাম। ধরা গলায় কিরন আপা বলেলন, ”সব শেষ!” আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। বাসা থেকে বের হতে হতে আমার অফিস মাছরাঙার প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজওয়ান হক রাজা ভাইকে ফোন করলাম এবং খবরটা নিশ্চিত করলাম।

সম্ভবত দশটা বেজে গেলো পশ্চিম রাজা বাজার পৌছাতে। ওই গলিতে ঢোকার পথে দেখলাম, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের একটি গাড়িতে করে মেঘকে কোথা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর উল্টোদিক থেকে প্রবেশ করছে সিআইডি’র ’ক্রাইম সিন’ গাড়ি। আমি বিনা বাধায় রুনি সাগরের পাঁচতলার ফ্লাটে উঠলাম। সেখানে তখন গমাধ্যমকর্মী, পুলিশ এবং রুনি সাগরের অল্প সংখ্যক আত্মী-স্বজনে ঠাসা। সবার চোখে অবিশ্বাস, যেনো যা ঘটেছে তা নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হচ্ছেনা কারো! যে রুমে হত্যাকান্ড হয়েছে সেই বেড রুমটি বন্ধ, ভেতরে পুলিশ কর্মর্তারা। রুনি সাগরের মৃতদেহ তখনো সেখানে। আলামত সংরক্ষন হচ্ছে। ওই রুমের সামনেই ডাইনিং স্পেসটিসহ রুমটি সিআইডি’র ক্রাইম সিন জোন’ ফিতা লাগানো। তাই শত চেষ্টা করেও দেখতে পারিনি ভেতরের অবস্থা। এরই মধ্যে একজন বললেন, রান্না ঘরের গ্রিলটি কাটা। আরেকজন বললেন, ওখান দিয়ে ছোট বাচ্চা ঢুকতে পারবে না। ‘মনে হয় আগে ছোট বাচ্চা ঢুকিয়ে দিয়ে ঘরের দরজা খুলেছে।’ উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিকের এসব মন্তব্য শুনতে শুনতে আমি রান্না ঘরে গেলাম, সেখানে তখন সিআইডি’র বহুল আলোচিত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আখন্দ। তাকে ওই কাটা অংশটি দেখিয়ে সাদা পোষাকের এক কর্মকর্তা বললেন, এখান থেকে কিভাবে ঢুকবে? কাহার আখন্দ কাটা অংশটি মনোযোগ দিয়ে দেখলেন, গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে নিচে কিছু দেখতে চাইলেন। তার মনোভাব বোঝা গেলোনা। আমি জানতে চাইলাম, তিনি মাথা নাড়তে নাড়তে ’দেখি’ বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি গ্রিলের কাটা অংশটি দেখলাম, ভালো করে। আটি ইঞ্চি মতো বর্গাকার ফাঁকা দিয়ে কোন্ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পক্ষে প্রবেশ করা সম্ভব কি না অনুমান করতে পারলাম না। মাথাই ঢুকবেনা’ কানে আসলো এক সহকর্মীর মন্তব্য। আমি চুলার দিকে তাকালাম। শূন্য দুই চুলার মাঝখানে একটি ফ্রাইপ্যান, দুটি ডিমের খোসা, অগোছালো টুকটাক জিনিসপত্র, ছড়ানো ছিটানো।

পরের দিন মেঘের কাছে শুনেছি, ‘দুইটা চোল (চোর) আমার ডিম খেয়ে ফেলছে। তিনটা ডিম ছিলো। আমার বাবাকে মেরেছে। আমাকে গুলি করতে চেয়েছিলো। গুলির মধ্যে ব্যাটারি লাগানো তাতে ছোট লাইট জ্বলছে ।” মেঘের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার একবারই কথা হয়েছে, এবং তা দিয়ে একটি নিছক মানবিক আবেদনময়ী রিপোর্ট প্রচাররিত হয় মাছরাঙা টেলিভিশনে।সেই রিপোর্টের কারনে আমি অনেক সমালোচিত হয়েছি। মেঘের ওই মানসিক অবস্থায় বাবা-মার মৃত্যু নিয়ে কথা বলা কতটা সঠিক ছিলো সেই বিতর্কে যাবোনা; তবে সব সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছি। মেঘ শিশুসুলভ এলোমেলো ভাবে বারবারই বলেছে, চোর ওর বাবাকে মেরেছে।মাকে আগে মেরেছে, পরে বাবাকে মেরেছে। রান্না ঘর থেকে চলে গেছে। নানুকে ফোন করে বলেছি, মিম্মি (মা)বাবা মরে গেছে।” আমি প্রশ্ন করেছিলাম, ওদেরকে চেনো? মেঘ না বোধক মাথা নেড়েছে, মুখে বলেছে, ‘ওদের নামটা জানিনা’।

রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে সিড়িতে হতবিহ্বল সহকর্মীদের পাশে এসে দাড়ালাম। মনের ভেতর অনেক ভাঙ্গচুর, অসংখ্য প্রশ্ন। দু’টি জ্বলজ্যান্ত মানুষ ভেতরে মরে পড়ে আছে, কিন্তু কেউই বলতে পারছে না ঠিক কী ঘটেছে সেখানে। কানে আসতে লাগলো মৃদু গুঞ্জন। মেঘ নাকি কাকে বলেছে, ওদেরকে পিকনিকে দেখেছে . . . রুনি-সাগর ভাইয়ের কোন্ও শত্রু থাকতে পারে, এটাই বিশ্বাস করা যায়না, সেখানে এতো বড় চেনাজানা শত্রু যারা, তারা এতোটা নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করবে!.কিছুই মাথায় আসেনা।

শূন্যতায় হাতড়াচ্ছি, এমন সময় দেখলাম সাগর সরোয়ারের আম্মা এবং বোন ‘আমার বাবু’ আমার সাগর রুনি’ বলে কাঁদতে কাঁদতে চারতলা সিড়ি দিয়ে উঠছেন। সাগর ভাইয়ের আম্মাকে ধরে নিয়ে গেলাম ভেতরে, রান্না ঘর লাগোয়া একটি রুমে, সম্ভবত রিডিং রুম। কিছুটা ফাঁকা ওই রুমে একটি টেবিল, বুকসেলফ—তবে কোনও চেয়ার ছিল না। কিছুক্ষন পরই সেখানে এলেন ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ। সাগর ভাইয়ের আম্মা তাকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমার একটাই ছেলে, আমার এইটাই বাবু. পুলিশ কমিশনারের মুখে কোন্ও কথা ছিলোনা। ‘আমরা দেখছি, আমরা দেখছি’ বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন। ঢুকলেন রুনির আম্মা। তাকে আগেই দেখেছিলাম, বসার ঘরে, ঘটনার আকস্মিকতায় তার চেহারায় ফুটেছিলো ভাবলেশ-বোধহীন গভীর শূন্যতা। জিজ্ঞেস করলাম, কি ঘটতে পারে?কিছু জানেন কিনা? কিছুটা অস্পষ্ট এবং স্বভাবসুলভ দ্রুতিগতিতে যা বললেন, তার ভাবার্থ: তিনি কিছুই বুঝতে পারছেননা। কখন কিভাবে খবর পেলেন? বললেন, সকাল সাতটার দিকে মেঘ তাকে ফোন করে। কিন্তু লাইনটি কেটে যায়। তিনি কলব্যাক করলে মেঘ ফোন ধরে জানায়, আম্মা, (মেঘ নানীকে আম্মা ডাকে) বাবা মা দুজনই মরে গেছে। মেঘের কন্ঠস্বর তার কাছে অস্বাভাবিক লাগে। ছুটে আসেন ‍রুনির ফ্লাটে, দরজা খুলে দেয় মেঘ। পরের দিন মেঘ আমাকে বলেছে, সে নিজেই দরজা খুলেছে। চোর যায়ার পর কি তুমি দরোজা বন্ধ করেছিলে? মেঘ বলেছে, ওরা জানালা ভেঙ্গে ফেলেছে।

রুনির আম্মার সঙ্গে কথা শেষ করে এসে দাড়ালাম ‘ক্রাইম সিন জোন’ ফিতার সামনে। ফিতার ওপারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোষাকের লোকজন। এপারে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা।তখন সম্ভবত বেলা সাড়ে এগারোটা কি বারোটা হবে। হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার রুমে তখনো পুলিশ। ফিতার ওপারে যাওয়ার একটু চেষ্টা করলাম, পুলিশের অনুরোধে ফিরে এলাম। এখন যখন পুলিশ আলামত নষ্ট হওয়ার কথা বলে, ভেবে পাইনা, পুলিশ তখন অতো দীর্ঘ সময় ভেতরে কি করেছিলো? পুলিশের উচু পদস্থ, অ-পদস্থ কমবেশি সবাই ওই রুমে ঢুকেছেন, কোনও গমাধ্যমকর্মীকে আমি ভেতরে ঢুকতে দেখিনি। এমনকি সাগর রুনির মৃতদেহ’র ফুটেজ মাছরাঙাসহ কয়েকটি চ্যানেল সবার আগে পৌছানো দু’ একটি চ্যানেল থেকে সংগ্রহ করেছিলো। আমি সেই ফুটেজেই দেখেছি ওই রুমের অবস্থা। হাত পা বাধা সাগর ভাই, আর বিছানা ঘেঁষে একটু বেকে থাকা রুনির মৃতদেহ। ওই ফুটেজটি ভালো করে দেখলে বোঝা যায় সেটি দরজার সামনে থেকে তোলা। 

পুলিশ সম্ভবত আটটা সোয়া আটটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌছায় রুনীর ভাই ন্ওশের রোমানও তখনই পৌছায়। রোমান বলেছে, সে ও ওই রুমে ঢোকেনি। এমনকি ততক্ষনাত ঘটনাস্থলে পৌছানো কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তারা দরজার সামনে থেকে দেখেছেন, ভেতরে প্রবেশ করেননি। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে আলামত নষ্ট হলো কি করে? করলোইবা কে? আলামতের কয়েকটি মৌলিক বিষয় রয়েছে, ‘সাধারন মানুষ কখনো রক্তের ওপর পা রাখেনা। কিন্তু খুনী রক্তের ওপর তার ছাপ রেখেই যায়, কেনো যেনো খেয়াল করতে পারেনা,’ নিজের ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে কথাটি বলছিলেন সিআইডির সাবেক কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান, পিপিএম। তিনি বলছিলেন, ‘পুলিশ কি আলামত চায়? এখন তো রিকসা ওয়ালাও স্যান্ডেল পরে। ধরে নিতে পারি খুনি জুতা পরেছিলো, তাই ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যাবেনা ঘটনার দুদিন পর কথা হয়েছিলো খালেকুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি আরও বলেন, ‘হত্যাকারীরা পেশাদার ভাড়াটে খুনী, তা না হলে শিশুটিকে হত্যা করতো। সাধারন মানুষ হলে শিশুটি প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ভেবে ভয় পেয়ে হত্যা করতো। তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের মটিভ কী হতে পারে- এর জাবাবে খালেকুজ্জামান পাল্টা প্রশ্ন করেন,
ওই বাসার দুটি ল্যাপটপের একটি নষ্ট, সেটি রেখে গিয়ে খুনী ভালোটি নিয়ে গেলো, কেন? তারা চেক করলো কখন? চোর ডাকাতদের তো এতো সময় থাকার কথা নয়!

চোর ডাকাত কি ল্যাপটপ নিতে পারেনা? 

পারে, তবে সেক্ষেত্রে তারা দু’টোই নিতো।

সাগোর সরোয়ারের দুটি মোবাইল ফোনের মধ্যে ব্যক্তিগত মোবাইলটি নিয়ে গেলো, অফিসেরটিসহ রুনির মোবাইলও রেখে গেলো, কেন?

চাঞ্চল্যকর অনেক হত্যা রহস্যের জট খোলা এই গোয়েন্দা নিজেই প্রশ্ন করেন, নিজেই জবাব দেন খুনীদের আক্রোশ সাগরের ওপর, যে কারনে তাকে এতো আঘাত করা হয়েছে, হাতপা বেধে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে, তারা যা চায় তা তার ল্যাপটপে সংরক্ষিত থাকতে পারে
 
ফিরে আসি ঘটনার দিনে। ক্রাইম সিন জোন ফিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে আবার ফিরে এলাম সিড়িতে। কেউ একজন কানের কাছে ফিসফিস করলো, রুনির ভাইকে এরেষ্ট করেছে।’ পরে শুনেছি, ওকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ডেকেছিলো, ছেড়েও দিয়েছে।আমি সিড়ি বেয়ে একেবারে নিচে নিমে এলাম। পার্কিং এ দাড়ালাম সাবেক কয়েকজন সিনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে। হঠাত দেখি বিভিন্ন চ্যানেলের রিপোর্টার ঘিরে ধরেছে ডিসি সাউথ ইমাম হোসেনকে। সেদিন আমি কোন্ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাই নি। তবু এগিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, ‘প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে হত্যাকারীরা পূর্ব পরিচিত’।
 
পুরনো সহকর্মীদের কাছে আবার ফিরে এলাম। সবর্ত্র তখন জ্বল্পনা-কল্পনা। রোপিত হচ্ছে গুজবের বীজ।

তখন সম্ভবত দেড়টা, ময়না তদন্তের জন্য সাদা প্যাকেটে মোড়ানো সাগর ভাই রুনিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। ঝাপসা চোখে স্লাইড শো’র মতো ভেসে ভেসে উঠলো রুনী সাগর ভাইয়ের স্মৃতি।যতবার মেঘের কথা ভাবি, মেঘের চেহারা ছাপিয়ে চোখে ভেসে ওঠে সমবয়সী আমার ছেলেটির মুখ। শূন্যতায় ভর করে ফিরে আসি বাসায়। একটু দম নিতে। আমার সন্তানটিকে একটু বুকে জড়িয়ে ধরতে। চারটার দিকে গেলাম আমার অফিসে। অনুরোধ আর নিজের চেষ্টা সত্ত্বেও আমি কোনও রিপোর্ট বানাতে পারলাম না। নির্দ্বিধায় স্বীকার করি, ওইদিন বুঝলাম, যতটা পেশাদার নিজেকে মনে করি, ততটা আমি নই।

সন্ধ্যার পর থেকে একটু পরপরই আমার মোবাইলটি বেজে ওঠে। গমাধ্যমকর্মীদের জড়িয়ে গুজব ছড়াতে থাকে। এখন এর নাম তো, একটু পর আরেকজনের নাম। সেই নামগুলোর মানুষরা এমন নৃশংশ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকতে পারে, তা কল্পনায়ও আনা যায়না। নাম গুলো এসেছে ‘হত্যাকারীরা পূর্ব পরিচিত’ পুলিশের এই মন্তব্যের সঙ্গে সামর্থিক ভাবে মেঘের বক্তব্য ‘ওদেরেকে পিকনিকে দেখেছি’। তবে জিজ্ঞাসা সত্ত্বেও মেঘ আমাকে এমন কোনও কথা বলেনি।

সারারাত ঘুমোতে পারিনি। সকালে বের হলাম হত্যাকাণ্ডের ফলোআপ রিপোর্ট করতে। তখন সম্ভবত সকালে সাড়ে নটা। রুনি সাগর ভাইয়ের পাঁচতলা ফ্লাটে ঢুকতে ঢুকতে কানে এলো একটি কন্ঠস্বর, ‘চল্লিশ সেকেন্ড কথা বলে ফোনটা ওখানেই রেখে দেয়াটা অস্বাভাবিক’, নিজেরা নিজেরা কথা বলছিলেন পুলিশের একজন আরেকজনের সাথে। পরে বুঝলাম কন্ঠস্বরটি ছিলো ডিসি সাউথ ইমাম হোসেনের। সঙ্গে ছিলেন দুজন সিআইডি কর্মকর্তা, শের--বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং আরও দু’ জন। তারা আমার সঙ্গে কোন কথাই বলতে চাইলেননা। অভিযোগ তুললেন, সাংবাদিকদের জন্য তাদের কাজে ধীরগতি হচ্ছে

আমি ফ্লাট থেকে বেরিয়ে সিড়িতে দাড়ালাম। কী করবো ভাবছি। এরইমধ্যে মেঘকে নিয়ে এলো রুনির তিন ভাই ও আম্মা। তখনই কথা হলো মেঘের সঙ্গে। জানলাম, মেঘ সারারাত ঘুমায়নি। অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কথা বলছে এলোমেলো।’ যা ছিলো ওই দিনের রিপোর্টের হেড লাইন।ওই দিনই মেঘের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ওর স্কুলের শিক্ষকরা। এডিট প্যানেলে বসে মেঘের একটি শব্দ কানে লাগে। বারবার ফুটেজটি রিপিট করে দেখি। অস্পষ্টভাবে মেঘ ওর শিক্ষককে বলছে গলায় অনেক ব্যাথা। পরে মেঘের গলার ছবিটি ভালো করে দেখি। সেখানে গভীর কালশিটে দাগ। নখ বসানো। ফোন করি রোমানকে। জানলাম, খুনীরা মেঘকেও নির্যাতন করেছে, তার টুটি চেপে ধরেছে। চুল টেনেছে এবং পুরুষাঙ্গে আঘাত করেছে। খুনীদের একজনের হাতের নখ বড় বড় যার দাগ বসে আছে মেঘের গলায়।

১২ এবং ১৩ ফেব্রুয়ারী সাংবাদিকদের জড়িয়ে শুরু হলো গুজবের উন্মাদনা। এমনকি রুনির পরকিয়া প্রেমের গালগল্প। আমি মেলাতে পারিনা। কারন রুনিকে নিয়ে কোনদিন এমন ’গসিপ’ কখনোই শুনিনি। তাছাড়া অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কোনও ঘটনার কুলকিনারা না পেলে পুলিশ পরকিয়া প্রেমের গল্প ফাদে। আর এতো আপত্য প্রেম যে দুজনকেই মেরে ফেলতে হবে! অযৌক্তিক লাগে। কিন্তু কেউ কাউকে অকারনে হত্যা করেনা, তা ও আবার পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনে অভ্যস্ত এমন অমায়িক দুজন মানুষকে! এরইমধ্যে জানলাম সাগর ভাইয়ের একটি বইয়ের কথা, ‘কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি’। বইটি গত বছর বই মেলায় প্রকাশ করে ভাষাচিত্র। বইটি সংগ্রহ করে পড়লাম। শান্তিচুক্তির পর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে লেখা অত্যন্ত স্পর্শ কাতর বইটি। এতে উঠে এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে কারা সমস্যা জিইয়ে রেখেছে, কারা তাদের অর্থ ও অস্ত্র দেয়-এমন তথ্য। এসব বিষয়ের দু একটি অংশ এখানে তুলে ধরছি: 

কলিমুল্লার (রহিঙ্গা গেরিলা নেতা) কোমরে একটি পিস্তল। ছোটখাট ছিমছাম। আমার তাকানোর ভঙ্গি দেখে সে বুঝে নিলো প্রশ্ন। বললো,

এটি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া। গিফট। 

কোন সেনাবাহিনী?

বুঝে নিন।

আমি বুঝতে পালাম। অনেক কিছুই আমাকে বুঝে নিতে হয়। 

আপনারা কি ধরনের অস্ত্র পান?

যখন যে ধরনের অস্ত্র প্রয়োজন। 

চাইলেই পান?

চাইলেই পাই। যখন প্রয়োজন খবর দেই। জায়গা ঠিক থাকে। ওখানে রেখে দেয়া হয়। গুনে নেই, ‍গুনে দেই। তবে গুলির কোন হিসাব থাকেনা। 

যোগাযোগ কি করে হয়?

ওয়ারলেস। আমরা এমন একটি ফ্রিকোন্সে ব্যবহার করি যা কেউ জানেনা।

মানে সেনাবাহিনী্ও না?

বাবা তো ছেলের জন্ম তারিখ ঠিকই জানে, তাইনা!

উত্তর পেয়ে গেলাম।

ওই রিপোর্টের শিরোনাম দিলাম-সেনা সহায়তায় মিয়ানমারের গেরিলারা বাংলাদেশে।

আমার এক সোর্সকে কয়েকদিন আগে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি কোন দলে ছিলেন জানিনা। তবে তাকে বাচিয়ে রাখাটা তিনপক্ষের জন্যই ছিলো বেশ ঝুকিপূর্ন। সব খবর তার কাছে আপনাআপনি চলে আসতো। কেবল আসেনি তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনার খবরটি

মূলত: ৭১ পৃষ্ঠার এই বইটিতে সাগর সরোয়ার অনেক চিঠিপত্র, ডায়েরির উল্লেখ করেছেন- যা তার কাছে সংরক্ষিত আছে,সহকর্মী শামীম আরা শিউলিকে বইয়ের একটি কপি সাগর ভাই উপহার দেয়ার সময় এমন তথ্য শেয়ার করেন। সেই সূত্র ধরেই অনেক অজানা তথ্য উপাত্ত এবং নথিপত্র তার সংগ্রহে থাকার কথা-জানিয়েছেন শিউলি
 
হত্যা রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানলাম, সাগর ভাই একই ইস্যুতে আরেকটি বই লিখছিলেন যা এ বছর বইমেলায় প্রকাশ হওয়ার কথা। এরজন্য তিনি অফিসে ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু লোকবলের অভাবের কারনে মাছরাঙা তাকে ছুটি দিতে পারেনি। বইটি সম্পর্কে মাছরাঙার স্টাফ রিপোর্টার মাযহার মিলনকে সাগর ভাই বলেছেন, এবার বোমা ফাটাবো। তখন জানবে সাগর সরোয়ার কী জানে আর কী লিখতে পারে

ধারনা করছি, ল্যাপটপেই থাকার কথা তার ওই বইয়ের পান্ডুলিপি।

প্রশ্ন জাগে, যে বইটি তিনি মাত্র গত বছরই মেলায় এনেছেন, তার দ্বিতীয় পর্ব লেখার প্রয়োজন হল কেন? তার কাছে কি নতুন কোনও তথ্য ছিলো? কি হতে পারে তা? তা কি কাউকে সংক্ষুব্দ করতে পারে? উত্তর জানা নেই।তবে পাহাড়ে ছিলো সাগর সরোয়ারের দীর্ঘ দিনের বিশ্বস্ত সোর্স। রিপোটিং ছেড়ে দিলেও সাগোর ভাই সেই সম্পর্কগুলো মেইনটেইন করতেন।

পুলিশ বা তদন্ত কর্মকর্তারা এই দিকে কতটা নজর দিয়েছেন, আমার সন্দেহ আছে। কারন আমি নিজে কয়েকদফা এ বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। উত্তর পেয়েছি দায়সারা গোছের। এমনকি পান্ডুলিপিটি উদ্ধারের জন্য তার ইমেইল এড্রেস এ খোজ করা হয়েছে কিনা, তেমন সদুত্তর পাইনি।

পুলিশ এখন ঘটনাটিকে ‌‌ডাকাতি’ হিসাবে দেখাতে সব ব্যবস্থা প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে। যদি পুলিশের কথা বিশ্বাস করি, তবে তাদের দক্ষতা নিয়ে শুধূ প্রশ্ন নয়, পুলিশের ‘প’ জানেন কিনা সন্দেহ জাগতে পারে। কারন ঘটনার দিন আব্দুল কাহার আখন্দসহ বাঘা বাঘা কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কী বুঝেছিলেন? আমার মনে আছে, তিন দিন পর রুনির আম্মাকে ডেকে পাঠানো হয় বাসা থেকে কিছু খোয়া গেছে কিনা জানতে। তখনই জানা গেলো রুনির গয়না নেই। ঘটনার দশ দিন পর পুলিশ ওই পরিবারের কাছে জানতে চেয়েছিলো, সাগর সরোয়ারের ল্যাপটপের রঙ। ঘটনার দিন থেকে যেসব গুজব বেরিয়েছে তা সাংবাদিকরা ছড়িয়েছে সত্য, তবে প্রতিটি গুজবের পেছনে রয়েছে কখনো পুলিশের ইঙ্গিত, কখনো তাদের রহস্যময় নিরবতা। এসব কিসের ইঙ্গিত? তাদের অদক্ষতার? নাকি ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চক্রান্ত?