Tuesday, February 28, 2012

প্রতিবাদে সিলেটে মানববন্ধন : সারী নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে ভারতের বিদ্যুেকন্দ্র আজ উদ্বোধন

সিলেট জেলার সারী নদীর উজানে মাইন্ড্রো লেসকা হাইড্রো ইলেক্ট্রিক ড্যাম নির্মাণ করে ১ম ইউনিট ৪২ মেঘাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আজ। এরই প্রতিবাদে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটসহ সিলেটবাসী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সারী নদী বাঁচাও আন্দোলন ও বাপা সিলেটের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে পেশীশক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে মরুভূমি করার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর উত্সমুখে ড্যাম বা বাঁধ দিয়ে পানির গতিরোধ করে বিদ্যুত্ উত্পাদন করছে। এতেকরে বাংলাদেশের একটি ব্যাপক অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে কৃষি ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে এবং কিছু সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় মন্দা খরাসহ দুর্ভিক্ষের মতো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বক্তারা আরও বলেন, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল এলাকা দিয়ে সারী নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উজানে ডাউকী চ্যুতির কাছে লেসকা মাইনথ্রু হাইড্রো ইলেক্ট্রিক বাঁধ দিয়ে ৩টি ইউনিটে ৪২ মেঘাওয়াট করে মোট ১২৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের কাজ ২০০২ সালে ভারতের তত্কালীন রাষ্টপতি ড. এপিজে আবদুল কালাম এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ১ম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এ সংবাদ সিলেট তথা সংশ্লিষ্ট এলাকায় চাউর হলে এলাকাবাসী, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিবাদ করলেও বর্তমান বাংলাদেশ সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আজ মাইন্ড্রো নামক স্থানে নির্মিত ড্যামের ওপর ১ম ইউনিটের বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুত্ উত্পাদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. মুকুল সাংমা। বক্তারা আরও বলেন, যদি শিগগিরই বাংলাদেশ সরকার বাঁধের ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে সারী নদীর পানি হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে সিলেটবাসীসহ দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে লংমার্চ, প্রতীকী অনশন, হরতাল, অবরোধ ও প্রতিবাদ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল-হাদির সভাপতিত্বে ও বাপা সিলেট জেলা সেক্রেটারি আবদুল করীম কিমের পরিচালনায় শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক মনজুর আহমদ। এতে বক্তব্য রাখেন বাপার সিলেটের সহ-সভাপতি ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদ, মাছরাঙ্গা টিভির সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক প্রতিনিধি সাংবাদিক আল-আজাদ, কমরেড সিকন্দর আলী, শাবির সাবেক রেজিস্ট্রার ড. জামিল আহমেদ চৌধুরী, সাংবাদিক আবদুল মালেক জাকা, এনটিভির সিলেট বুরো চিফ ময়নুল হক বুলবুল, যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার সংগ্রাম সিংহ, সাংবাদিক ইকরামুল করীম ইপু, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন, মনিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি নির্মল কুমার সিংহ, গোয়াইনঘাট উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কানাইঘাট সচেতন নাগরিক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুর রহিম, গোয়াইনঘাট মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি নূর আহমদ, সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সেক্রেটারি মাহবুবুল আলম, সদস্য আলী আকবর রাজন, বিনয় দেব, জয়নুল আবেদীন, আলীম উদ্দিন, মীর হোসেন, আবুল খয়ের, রাসেল আহমদ, শফি উল্লাহ মাসরুর, রিয়াজ উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, মেহদী হাসান প্রমুখ।

 

বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কালিমাময় অধ্যায়ে পরিণত হতে চলেছে বিপিএল

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে কালিমা লেপে দিয়েছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। সোমবার রাতে বিপিএলে চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু প্রেস বক্সে এসে জানান,'বাই লজ ভুল ব্যাখায় বরিশালের সেমিতে খেলার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে বরিশাল নয়, চট্টগ্রাম সেমিতে খেলবে রাজশাহীর বিপক্ষে।'


তাহলে এই দুই দিন যাবত যা হচ্ছে এর ব্যাখ্যা কি? বিপিএল বলেছিল দল গুলো বাইল লজ বোঝে না। আর চট্টগ্রাম কিংস বলছে বিপিএল বাই লজের ধারা অমান্য করেছে।

সব ঠিক ছিল, কিন্তু রাতের অন্ধকারে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সিদ্ধান্ত পাল্টে দেয়। সংবিধানের ২১-এর ৮ এর ২ ধারায়  নাকি আবারও ভুল ব্যাখা হয়েছে। তাই চট্টগ্রাম বাদ বরিশাল সেমিতে খেলবে। রাত ২টা পর এই সিদ্ধান্ত বিপিএল লিখিতভাবেই জানিয়ে দেয় চট্টগ্রাম কিংসের মালিকপক্ষকে। কিন্তু কোন ধারায় বিপিএল এটা করেছে? এর ব্যাখাটাই বা কী? চট্টগ্রাম কিংসের মালিক সামীর কাদের চৌধুরীর কোনো প্রশ্নের জবাব রাতে বিপিএলের কর্মকর্তারা দিতে পারেনি।

সেমিফাইনাল শুরুর দুই ঘণ্টা আগেও দর্শক জানতো চট্টগ্রাম খেলছে। সেটা ভেবেই মাঠে এসেছে চট্টগ্রামের দর্শক। কিন্তু বিপিএলে এসব কি হচ্ছে? এমন প্রশ্ন সাধারণ দর্শকদের।

সেমিতে অন্যায়ভাবে বরিশালকে টেনে তোলায় চট্টগ্রাম তা মেনে নিতে পারেনি। আর এ কারণেই বিপিএলের শেষ চারের লড়াইয়ে বাদপড়া দল চট্টগ্রাম কিংস ঘোষণা করেছে, চট্টগ্রাম বিপিএল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাবে।

মধ্যরাত থেকেই চট্টগ্রাম কিংসের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা সকাল নাগাদ খবর মিডিয়াতে পৌঁছে দেয়।

বেলা সাড়ে ১১টায় রূপসী বাংলা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন দলটির পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এস কিউ গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সামির কাদের চৌধুরী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মামলা করার কথা জানালেন।

সামির কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন,''বাইলজ ভেঙ্গে আমাদের সেমিফাইনাল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ২১ এর ৮ এর দুই উপধারা ও এক উপধারা মিলিয়ে নিয়ম বানানো হয়েছে। কিন্তু এভাবে একেক উপধারা থেকে একেক অংশ নিয়ে নিয়ম বানানো যায় না। আমরা আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি, এরই মধ্যে আদালতে আমাদের প্রতিনিধি গিয়েছেন।''

তিনি বলেন, ''ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স চট্টগ্রাম কিংসের কাছে এক ম্যাচ হারলেও সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। বরং দুই দলের সঙ্গে জেতার কারণে গ্ল্যাডিয়েটর্সকে সেমিফাইনালে তুলে দেয়া হয়েছে। পরে বরিশাল বার্নার্সের সঙ্গে আমাদের খেলা 'হেড টু হেড' হিসেব করে রান রেটে আমাদের বাদ দেয়া হয়েছে।''

সামীর কাদের চৌধুরীর দাবি, ''এটা বাইলজের পরিষ্কার লঙ্ঘন। আর সে কারণেই আইনি লড়াই।''

এক পর্যায়ে বিপিএলের অভ্যন্তরীণ গোপন বিষয় প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন সামীর কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন,''বিপিএলের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিপিএলের সবকিছুতেই জুয়ার বা বাজির ছায়া দেখতে পেয়েছি। আমি এ পর্যন্ত তিনবার স্পট ফিক্সিং বা ম্যাচ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব পেয়েছি। প্রতিবারই আমি দুর্নীতি দমন ও নিরাপত্তা ইউনিটকে জানিয়েছি কিন্তু বিসিবির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি।''

তিনি বলেন, ''আসলে বিপিএল পুরোপুরি জুয়ার আসর হয়ে আছে। আমার সন্দেহ হচ্ছে সেই জুয়ার কারণেই বরিশাল বার্নার্সকে সেমিফাইনালে খেলানো হচ্ছে কী না।''

শোনো যাছে বিপিএলের সঙ্গে ৬ দলের আনুষ্ঠিক চুক্তি স্বাক্ষর এখনও নাকি হয়নি? এটা কি সত্য? যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে কি আপনি এই পরিস্থিতিতে বিপিএলের সঙ্গে চুক্তি করবেন? জবাবে সামীর কাদের চৌধুরী বলের,'অনেক টাকা বিনিয়োগ করে দলে গঠন করলেও এখনো বিসিবির সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। আমি আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছি। এর আগে এনসিএলেও অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। সেখানেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আর এবারের অঙ্কটা তো আরও বড়, সে কারণে ঝামেলাগুলোও আকারে আরও বড় হচ্ছে। আমরা টাকা ফেরত দিয়ে দিলে আমি সালাম দিয়ে চলে যাব। এবং চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে এই মুহূর্তে আমার আর কোনো আগ্রহ নেই।''

ম্যাচ পাতানো নিয়ে বিসিবি কিছু করছে না বলে অভিযোগ সামিরের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,''পাকিস্তানের যে সন্দেভাজন একজন নাগরিককে ধরা হয়েছে সেটা কিন্তু বিসিবির কৃতিত্ব নয়। চট্টগ্রাম কিংস তাকে ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপর থেকে ওই ব্যাপারে আমাদের আর কিছু জানানো হচ্ছে না।''

বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল আমাদের কোনো তথ্য জানায়নি পর্যন্ত। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে বিসিবি কার্যালয়ে গেলে রাত দুইটা ১৯ মিনিটে আমাদের একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে জানানো হয়, সেমিফাইনালে খেলছি না আমরা।

অথচ সেমিফাইনালে খেলার নিশ্চয়তা পেয়ে আমরা এরই মধ্যে ওমর আকমল ও ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়ে এসেছি, এর দায় এখন কে নেবে?'

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম কিংসের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও ব্যবস্থাপক নাসির আহমেদ নাসুও উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সুজন বলেন,'বিপিএল এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো সুষ্ঠু উত্তর দিতে পারেন নি। যারা ঠিকভাবে টুর্নামেন্ট চালাতে পারেন না তাদের ওইসব পদে থাকার নৈতিক অধিকার আছে কী সে প্রশ্ন তোলাই অবান্তর নয়।''

চিটাগং কিংসের দলের অন্যতম কর্ণধার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।

চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে বরিশাল বার্নার্সকে সেমিফাইনালিস্ট ঘোষণা করে বিপিএল পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই এই সংবাদ সম্মেলনকরা হয়।

চট্টগ্রামের সংবাদ সম্মেলনের সময় বরিশাল বাদে অন্য তিন সেমিফাইনালিস্ট দলের কর্মকর্তাদেরও সেখানে দেখা গেছে। ছিলেন ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের ব্যবস্থাপক কাজী শফিকুল হক হীরা, দুরন্ত রাজশাহীর ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ, খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের ব্যবস্থাপক জাহিদ রাজ্জাক মাসুম।

ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের টিম ম্যানেজার শফিকুল হক সাংবাদিকদের জানান, নিয়ম ভঙ্গ করে যদি চট্টগ্রাম কিংসকে বাদ দেয়া হয়, তবে তারা চট্টগ্রামের প্রতি তাদের সমর্থন থাকবে।

দুপুর ২টায় প্রথম সেমিফাইনালে দুরন্ত রাজশাহী মুখোমুখি হবে বরিশাল বার্নার্সের।

হীরার মতোই চট্টগ্রামের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়ে রাজশাহী দলের ব্যবস্থাপক ফারুক সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা সেমিফাইনাল ম্যাচে অংশ নিচ্ছেন।

অন্যদিকে সর্বোশেষ তথ্য অনুয়ায়ী আদালত চট্টগ্রাম কিংসের সেমিফাইনাল স্থগিতাদেশের আবেদন গ্রহণ করেনি।


Tuesday, February 21, 2012

প্রসঙ্গ ‘সাইবার যুদ্ধ’

বেশ কিছুদিন থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের হাজার হাজার ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের হ্যাকাররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাবি করেছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধে তাদের এ উদ্যোগ এবং এরই মধ্যে তারা ভারতের ২৬ হাজার ওয়েবসাইটে আক্রমণ চালিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সাইবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে হ্যাকাররা। এ পরিস্থিতিতে সর্বত্র চলছে তুমুল আলোচনা। এই সাইবার যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন
আহসান হাবিব
হ্যাকিং নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং ব্লগে।

বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশ ব্যাক হ্যাট হ্যাকার্স’ নামক দলটি গত মঙ্গলবার দাবি করেছে তারা এরই মধ্যে ভারতের ২০ হাজার ওয়েবসাইটের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। এ দাবির সত্যতা পাওয়া গেছে, ভারতের হায়দরাবাদ-ভিত্তিক ইংরেজি ভাষার দৈনিক ক্রনিকল প্রকাশিত এক সংবাদে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী হ্যাকাররা ২০ হাজার ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। বাংলাদেশের এ হ্যাকার গ্রুপটি ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়াসহ জনপ্রিয় শেয়ারবাজার-বিষয়ক সংবাদ ওয়েবসাইটও হ্যাক করেছে। ভারতের ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে—ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের ওয়েবসাইট, ভারতীয় ভ্যালেন্টাইন উপহার কেনার ওয়েবসাইট, নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইন্ডিয়া স্টক এক্সচেঞ্জ, ভারতীয় টেলিকম অপারেটরসহ নানা ওয়েবসাইট বাংলাদেশী হ্যাকারদের আক্রমণের কবলে পড়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ভারতের হ্যাকাররাও চালাচ্ছে পাল্টা আক্রমণ, আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় চারশ’ ওয়েবসাইট।
সব হ্যাকার গ্রুপ একসঙ্গে
বাংলাদেশ ব্লাকহ্যাট হ্যাকারের (বিবিএইচএইচ) ঘোষণার পর আরও কয়েকটি বাংলাদেশী হ্যাকার গ্রুুপ একাত্মতা প্রকাশ করে ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোয় আক্রমণ শুরু করেছে বলে তারা দাবি করেছে। বাংলাদেশ ব্লাকহ্যাট হ্যাকার মিডিয়া রিলেশন গ্রুপের পক্ষে দাবি করা হয়েছে— এক্সপায়ার সাইবার আর্মি, বাংলাদেশ সাইবার আর্মি, আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুুপ জেডএইচসি এবং দ্য হ্যাকার আর্মি এরই মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাসেরও। বাংলাদেশী হ্যাকারদের দাবি তারা বেশ দক্ষ। ভারত তাদের সীমান্ত হত্যাকাণ্ড না থামালে তারা পুরো ভারতের সাইবার স্পেসকে ‘হেল’ বানিয়ে দেবে। এতে ভারতীয় হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের ওয়েবমাস্টারদের যা করতে হবে তার উপায়ও বাতলে বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

নিজ থেকেই সরকারি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত

বাংলাদেশী হ্যাকারদের দ্বারা পর্যুদস্ত হয়ে নিজ থেকেই ভারতীয় সব সরকারি ওয়েবসাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। গত সপ্তাহে ভারতীয় প্রভাবশালী গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত এক সংবাদে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী হ্যাকারদের দ্বারা ভারতীয় ২০ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিএসএফের ওয়েবসাইট ছাড়াও ভারতীয় অনেক সরকারি ওয়েবসাইট রয়েছে এ তালিকায়। বাংলাদেশ সাইবার আর্মি নিজেদের ব্লাকহ্যাট পরিচয় দিয়ে ওয়েবসাইট আক্রমণের এ যুদ্ধে নেমেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদ অনুযায়ী, বিএসএফের মতো সংবেদনশীল ওয়েবসাইটগুলোতে একের পর এক আক্রমণ আসার কারণে সরকার তাদের সব ওয়েবসাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উদ্বিগ্ন প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট

ভারত ও বাংলাদেশের হ্যাকারদের পরিচালিত এই সাইবার যুদ্ধ নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শীর্ষ প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট। তারা ভারত-ভিত্তিক অনলাইন বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছে। হ্যাকাররা মাইক্রোসফট, ভারতের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় এবং সাইটটি ব্যবহারকারীদের তথ্য সরানোর চেষ্টা করে। তবে মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটে এ আক্রমণ বাংলাদেশের কোনো হ্যাকার গোষ্ঠীর কাজ কিনা, তা জানা যায়নি।

হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে ছদ্মবেশে ভারতীয় গোয়েন্দা!

বাংলাদেশী হ্যাকারদের ধরতে ভারতীয় গোয়েন্দারা এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। ভারতের সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ দল এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর (সিবিআই) একাধিক প্রতিনিধি রয়েছে এ দলে। গত বৃহস্পতিবার সাইবার বিশেষজ্ঞ একটি দলসহ ভারত থেকে বিশেষ বাহিনীর এসব একাধিক গোয়েন্দা সদস্য ঢাকায় এসেছেন। ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণকারীর ছদ্মবেশে তারা অবস্থান করছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে যেসব হ্যাকার ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোয় আক্রমণ চালাচ্ছে এবং যেসব হ্যাকার গ্রুপ ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে তাদের গ্রেফতারে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দিল্লির বাংলাদেশী হাইকমিশন বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকলেও দু’দেশের পক্ষেই বিষয়টিতে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। এমন খবর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ মাধ্যম ‘উইকলি ব্লিজ-এ। 
তবে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে এখনও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সংবাদ মাধ্যমটিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশী সাইটগুলোয় বড় ধরনের আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় হ্যাকাররা, যা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন, বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেসের ওয়েবসাইটগুলো আক্রমণই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।

এসব গোয়েন্দা ছদ্মবেশে বাংলাদেশে এলেও ভারতীয় গোয়েন্দা দল বাংলাদেশী হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সহযোগিতা নেবে। সংস্থাগুলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, সাইবার যুদ্ধের বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আর এ কারণে হ্যাকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এরই মধ্যে একটি বিশেষ বাহিনীকে এ ব্যাপারে কাজ শুরুরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তবে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল র্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের প্রধান কমান্ডার সোহায়েল আমার দেশকে জানালেন, এ ধরনের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তিনি এটাকে ভিত্তিহীন গুজব বলে মনে করেন। তিনি বলেন, কোনো ওয়েবসাইট যদি হ্যাক হয় তবে অপরাধী ধরতে র্যাব সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এ ব্যাপারে র্যাবের রয়েছে প্রযুক্তিতে দক্ষ শক্তিশালী টিম।

ভিডিও বার্তায় হ্যাকারদের উদ্দেশ্য

ই-মেইলে পাঠানো ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার গ্রুপ বলছে, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার। ভারতে সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমরা সম্প্রতি ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোয় ব্যাপক আক্রমণ শুরু করেছি। আমাদের খারাপ কোনো উদ্দেশ্য নেই, আমরা সীমান্তে বিএসএফের হাতে মরতে চাই না। চাই মানুষের মতো বাঁচতে, বিএসএফের কাছে কুত্তার মতো গুলি খেয়ে মরতে চাই না। সীমান্তে যাতে নিরীহ মানুষকে আর মরতে না হয় সে দাবিতে আমরা সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছি।

ইন্টারনেটে যৌথভাবে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে, ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার গ্রুপ, বাংলাদেশ সাইবার আর্মি এবং এক্সপায়ার সাইবার আর্মি। এসব ভিডিওটিতে রোবোটিক ভাষায় হ্যাকাররা জানিয়েছে, প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের উদ্দেশ্য সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া। আমরা এরই মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইটে আক্রমণ চালিয়েছি। ভারতের সাইবার স্পেস এখন আমাদের দখলে রয়েছে। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, ভারত সরকার আমাদের বার্তাটি এখনও বুঝল না। তারা বিএসএফের সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 

এখন আমরা বলতে চাই, ভারত সরকারকে অবশ্যই সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের গুলির নির্দেশ তুলে নিতে হবে। 

সামপ্রতিক দেয়া বিবৃতিটি বাতিল করার জন্য বিএসএফ প্রধানের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা বুলেট মুক্ত ভারত বাংলা সীমান্ত চাই। নিরীহ মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা দাও। আমাদের আরও একটি নতুন ইস্যু আছে, টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ কর। আমাদের সাইবার যুদ্ধ চলতেই থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারতীয় অপরাধ থামাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয়। আমাদের নিরাপদ জীবন দাও, নিরাপদ সাইবার বিশ্ব বুঝে নাও!

সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি আমরা কখনও ভুলব না, কখনও ক্ষমা করব না এবং তাদের ছেড়ে দেব না। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ কর অথবা আমরা তোমাদের সাইবার স্পেস ধ্বংস করে দেব। কোথায় তোমাদের মানবিকতা, কোথায়? এটি বিএসএফের জন্য খুব লজ্জাজনক।

টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করতে হবে। তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। ভারতীয় মিডিয়াগুলোকে হয় বাংলাদেশে বন্ধ করতে হবে অথবা বাংলাদেশের মিডিয়াকে ভারতে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড থামাতে হবে নতুবা আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, তোমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি খাত এবং শেয়ারবাজার ওয়েবসাইট ধ্বংস করে দেব।

তির্যক মন্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ

সাম্প্রতি সাইবার যুদ্ধ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেছেন, ‘যারা ভারতীয়দের সাইবার স্পেস ধ্বংস করছে, তারা স্বাধীনতাবিরোধী ও ইসলামী সন্ত্রাসী’। গত শুক্রবার বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার্স সংগঠনের নামে ই-মেইলে পাঠানো একটি বার্তায় এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের হ্যাকার গ্রুপ ব্ল্যাকহ্যাট। হ্যাকার গ্রুপটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘এভাবে মিথ্যাচার না করলেও পারতেন। আমরা কোনোভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী নই।’

বাংলাদেশী হ্যাকারদের ভাষ্য, ‘আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ নেই, আমরা ধর্মীয় সন্ত্রাসীও নই। দেশের নিরীহ মানুষের বুকে তাজা গুলি এবং রক্তেভেজা মাটি যাঁরা সহ্য করতে পারেননি, সে তরুণরাই সাইবার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই প্রতিদিন যুদ্ধে যুক্ত হচ্ছেন সাধারণ যোদ্ধারা। আমাদের কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। আমরা স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কার্যকলাপ তো করছিই না, বরং স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধেই আওয়াজ তুলছি। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ—সব ধর্মের সাইবার যোদ্ধাই নীরবে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন।’ হ্যাকার সংগঠনটি আরও বলেছে, আমরা আজ যে প্রতিবাদ করছি, আসলে এর কোনো দরকার ছিল না, যদি আমাদের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকরা তাদের স্থান থেকে সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান করতে পারতেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যারা হ্যাক করছে তাদের বোঝা উচিত বাংলাদেশের আইটি সেক্টর ভারতের চেয়ে অনেক দুর্বল। ভারতীয় আইটি এক্সপার্টরা যদি বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেয় তাহলে এর ফল খুব ভালো হবে না। তিনি দাবি করেন, এসব হ্যাকারকে উত্সাহিত করছে কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী ও মিডিয়া। আর এদের সঙ্গে জড়িত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের হ্যাকাররা।

হ্যাকার গ্রুপের এক প্রতিবাদে মোস্তাফা জব্বারের এ বক্তব্যের জন্য তাকে ‘ভারতের দালাল’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। হ্যাকার গ্রুপের প্রতিবাদে বলা হয়, ‘দেশের নামসর্বস্ব তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, আমরা নাকি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ধ্বংস করার জন্য নেমেছি। তাকে বলতে চাই, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কতটি বছর ধরে আপনারা পিছিয়ে রেখেছেন তা কি আমরা ভুলে গেছি? তরুণরা অনেক কিছুই বোঝে, অন্তত কোনটি ভালো কোনটি মন্দ সেটি বোঝার ক্ষমতা তাদের আছে। তারা এটাও বোঝে যে, কী কী বাধা তৈরি করে আপনারা দেশের তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছেন।’

অন্যদিকে এটিএন নিউজে ‘কোড রেড’ নামে জনৈক ব্যক্তিকে মুখোশ পড়িয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে সাইবার যুদ্ধের নেতা হিসেবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার্স-এর পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদ বার্তায় বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার, এক্সপায়ার সাইবার আর্মি এবং বাংলাদেশ সাইবার আর্মির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এটিএন নিউজের এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাই। আমরা জানতে পেরেছি, মুন্নি সাহা পুরো কাহিনীটি তৈরি করেছেন। ভবিষ্যতে ভারতপ্রেমী অনেক সাংবাদিকের কল্যাণে হয়তো অনেক হ্যাকার নেতাকে টেলিভিশনে দেখা যাবে, তাদের বিশ্বাস না করার জন্যও ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ফেসবুক, টুইটার, বিভিন্ন ব্লগ তথা অনলাইন কমিউনিটিতে এসব মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কোনো কোনো সাইটে মন্তব্যকারীদের ছবিতে জুতা পরিয়ে তাদের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

 

Sunday, February 19, 2012

সংবাদ মাধ্যমের কাছে বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার্সের বার্তা

আমরা স্বাধীনতাবিরোধী নয়, ধর্মীয় সন্ত্রাসী নয়… আমরা দেশের জন্য কাজ করছি..
* পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি-কে বলছি- এভাবে মিথ্যাচার না করলেও পারতেন। আমরা কোনোভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী নয়।

* মোস্তাফা জব্বারকে বলছি- যে ভারত আপনাকে তাদের দেশে যাওয়ার ভিসা দেয় না, সেই ভারতের জন্য কেন দালালি করেন? আর কত দালালি করবেন আপনি?

আমরা বাংলাদেশের সাইবার যোদ্ধা। সীমান্তে দেশের নাগরিকদের নিরাপদ জীবনের দাবিসহ বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যে ভারতের সঙ্গে ‘সাইবার যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছি। আমাদের যুদ্ধ চলছে, একের পর এক ভারতীয় ওয়েবসাইট আক্রমণ করে চলেছি।

কেন আমাদের সাইবার যুদ্ধ?

আমাদের সাইবার যুদ্ধগুলোর পিছনে যে দাবি রয়েছে সেগুলো হল:

১. বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশী হত্যা কর বন্ধ করতে হবে। দেখামাত্র গুলি করা কোন সভ্য জাতির আচরণ হতে পাওে না। আমরা তাদের কাছ থেকে মানবিক আচরণ চাই। আমরা বলতে চাই, সীমান্তে আর কোন বাংলাদেশি নাগরিকের লাশ যেন না পড়ে।
২. টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করতে হবে।

৩. তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।

৪. আমরা চাই ভারতীয় কোন টেলিভিশন চ্যানেল আমাদের দেশে আসবে না, যদি আসে তাহলে আমাদের সবকটি টেলিভিশন চ্যানেলকে পুরো ভারতে চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. বাংলাদেশ বিরোধী বিএসএফ-এর সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে এবং অপরাধীদের সাজা দিতে হবে।

৬. ভারতকে বাংলাদেশ বিরোধী সব কর্মকাণ্ড থামাতে হবে।

আমাদের মতো কিছু তরুণকে কেন যুদ্ধে নামতে হল?

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ একের পর এক নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করে যাচ্ছে। এই রাষ্ট্র তার নাগরিক হত্যার প্রতিবাদ ঠিকমতো করতে পারছে না। নিজ নাগরিককে নগ্ন করে নির্যাতনের পরও যখন এই রাষ্ট্রযন্ত্র চুপ থাকে, দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে, দেশের নিরীহ মানুষদের প্রতি যার ভালোবাসা আছে, সে কিভাবে চুপ থাকবে? সে কেন চুপ থাকবে? সে কি বিবেকহীন? সে কি আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মত চোখ বুজে থাকে? রাষ্ট্রযন্ত্র যখন এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি তখন আমাদের মতো একদল তরুণকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে, আমরা কিভাবে প্রতিবাদ করতে পারতাম? এরকম সাইবার যুদ্ধ শুরু করা ছাড়া আমাদের আর উপায় কি?

আমরা কি স্বাধীনতাবিরোধী? আমরা কি অপরাধী?

আমরা বলতে চাই, দেশের নিরীহ মানুষগুলোর বুকে তাজা গুলি যারা সহ্য করতে পারেনি সেইসব তরুণরাই এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছে। হাজার হাজার তরুণ এখন এ সাইবার যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই যুদ্ধে যুক্ত হচ্ছেন সাধারণ যোদ্ধারা। কোন রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংশ্লিষ্টতা নেই এ যুদ্ধে। অথচ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি আমাদের বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী! উইকলি ব্লিজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে দেখা যায়, তিনি সাইবার যোদ্ধাদের ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ এবং ‘ইসলামী সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দিপু মনি কি চিন্তা করেছেন যে তার এ কথায় কারা লাভবান হল? স্বাধীনতা বিরোধীরাই! তারা আজ বলতে পারবে, দেখ- আমাদের ছেলেরা কত ট্যালেন্ট! আমাদের কত ক্ষমতা!! আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছি!!!

আমাদের যুদ্ধে ইসলাম বা অন্যকোন ধর্ম নিয়ে আমাদের কোন ইস্যু নেই, তাহলে কেন আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী এ প্রতিবাদকে ধর্মের সাথে মিশিয়ে ফেলছেন? খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, এই সীমান্তে হত্যা কিংবা নির্যাতনের প্রতিবাদে সবাই শামিল আছে। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ। সব ধর্মের যোদ্ধারাই নীরবে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন হিন্দু যোদ্ধা কিভাবে ‘ইসলামী সন্ত্রাসী’ হয়?
আমাদের সাফ কথা, আমাদের কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। আমরা স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কার্যকলাপ তো করছিই না বরং স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেবার বিরুদ্ধেই আওয়াজ তুলছি।

আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, আর কত চোখ বুঁজে থাকবেন? শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে সাধারণ মানুষের কণ্ঠ আপনি কিভাবে শুনতে পাবেন? সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে আসুন, সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর শুনুন। আপনাকে অনুরোধ, আপনি যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন্তব্য একবার ঘেঁটে দেখবেন কি? তবেই বুঝতে পারবেন তরুণরা কি বলতে চায়। আর সর্বশেষ অনুরোধ, আপনি আপনার বক্তব্যের জন্য দু:খ প্রকাশ করুন, বক্তব্য তুলে নিন।

দেশের নামসর্বস্ব তথ্য-প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, আমরা নাকি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ধ্বংস করার জন্য নেমেছি। তাঁকে বলতে চাই, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কতটি বছর ধরে আপনারা পিছিয়ে রেখেছেন তা কি আমরা ভুলে গেছি? তরুণরা অনেক কিছুই বোঝে, অন্তত কোনটি ভালো কোনটি মন্দ সেটি বোঝার ক্ষমতা তাদের আছে। তারাও এটাও বোঝে যে কি কি বাঁধা তৈরি করে আপনারা 
দেশের তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছেন। আপনি বিসিএসের প্রেসিডেন্ট যখন ছিলেন, তখন দেশে নামসর্বস্ব কিছু তথ্যপ্রযুক্তি মেলা করা ছাড়া আর কি করতে পেরেছেন? দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের কোন সমস্যাটি সমাধানে আপনি ভূমিকা রেখেছেন? বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়া আপনার কোন কর্মকণ্ডটি আছে বলতে পারবেন? তরুণরা এসব ভুলেনি, ভুলবে না।

তাঁর মতে, আমরা খুব ভয়ংকর রকমের অপরাধ করছি! আমরা তাঁকে বলতে চাই, সীমান্তে ‘নিরীহ’ মানুষ হত্যা করা কি অপরাধ নয়? গুলি করে পাখির মত কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখাটা কি অপরাধ নয়? একজন মানুষকে উলঙ্গ করে পৈশাচিক উল্লাস করাটা কি অপরাধ নয়? আপনি আমাদের এমন একটা উপায় বলে দিন তো দেখি, যে উপায়ে আপনার ভারতের দাদাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারি এবং সে উপায়টি হয় ‘ভালো’।

সাইবার যোদ্ধাদের আক্রমণের মধ্যে কিছু ভারত-প্রেমী জামাত-শিবির খুঁজে বের করেছেন। তারা দাবি করেছেন জামাত শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য ভারতের উপরে সাইবার আক্রমণ করেছে। আমরা বলতে চাই, আমরা পূর্ণ দেশপ্রেম থেকেই এ ধরণের যুদ্ধ শুরু করেছি, চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা যুদ্ধ করছি…
Source :

Tuesday, February 14, 2012

শত শত ওয়েবসাইটে হ্যাকারদের হানা

বাংলাদেশের কিছু ওয়েবসাইট সোমবার হ্যাকিংএর শিকার হবার পর আজ ভারতেও নতুন করে কয়েকশ‘ ওয়েবসাইট আজ হ্যাকারদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে৻
কোলকাতা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, আক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ওয়েবসাইটসহ সরকারি বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে৻
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশী ও ভারতীয় হ্যাকারদের মধ্যে তাদের ভাষায় ‘একটি অঘোষিত সাইবার যুদ্ধ‘ চলছে৻
বাংলাদেশ কম্পিউটার এমারজেন্সী রেসপন্স টিমের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ বিবিসিকে বলেন, মূলত ভারত এবং বাংলাদেশের কয়েকটি হ্যাকার গ্রুপের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশী হ্যাকাররা মহারাষ্ট্র পুলিশেও ওয়েবসাইট আক্রমণের মাধ্যমে ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক করা শুরু করে৻ 

ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলো হ্যাক করার কৃতিত্ব দাবি করে ‘বাংলাদেশ সাইবার আর্মি ‘ নামে একটি কথিত হ্যাকার গ্রুপ আজ ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে৻ এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট ফেসবুকে তাদের একটি ‘ফ্যান পেজে‘ হ্যাক করা ওয়েবসাইটগুলোর একটি দীর্ঘ তালিকা দেয়া হয়েছে৻
ওই হ্যাকাররা দাবি করে যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিবর্ষণে বাংলাদেশী বেসামরিক লোকদের নিহত হবার ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ জানাতে এবং টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতেই তারা এ কাজ করেছে৻
এর একদিন আগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কর্মকর্তারা জানান, বিদেশী হ্যাকাররা কিছু বাংলাদেশী সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করে৻
তবে সাইটগুলো কয়েক ঘন্টা পরই আবার চালু করা সম্ভব হয় বলে বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক পরামর্শক এ আর হাজিমুল হক৻
কারা এই সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে তা বাংলাদেশী কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্টভাবে বলেন নি৻
তবে বাংলাদেশী সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে ঢাকা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে, ‘ইন্ডিয়ান সাইবার আর্মি ‘ নামে পরিচিত ভারতীয় হ্যাকারদের একটি গোষ্ঠী এই আক্রমণের জন্য দায়ী হতে পারে৻

সুমন আহমেদ বলেন, আক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলো পরীক্ষা করেই বোঝা যায় যে তারা কোন দেশের, তা ছাড়া অনেকক্ষেত্রে তারা নিজেদের পরিচয় জানিয়ই হ্যাক করে৻ অনেক ওয়েবসাইটেই সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা না থাকায় সহজেই তারা হ্যাকারদের শিকার হয়৻
বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া খবরে জানা যায় যে বেশ কিছু দিন ধরেই ভারত ও বাংলাদেশের শত শত ওয়েবসাইট হ্যাকারদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে৻

সম্প্রতি কথিত বাংলাদেশী হ্যাকারদের হাতে আক্রান্ত হয় বেশকিছু ভারতীয় ওয়েবসাইট৻ এরই পাল্টা জবাব হিসেবে বাংলাদেশের সরকারী ওয়েবসাইটে হ্যাকিংএর ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন৻
কথিত বাংলাদেশী হ্যাকার গোষ্ঠী আরও দাবী করছে যে ভারতীয় হ্যাকাররাই এই কথিত সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে এবং তারাই প্রথমে বাংলাদেশের কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিল৻

ভারতের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথাকথিত সাইবার যুদ্ধ সম্বন্ধে এখনও কিছু বলা হয় নি৻

তবে আরিফ আহমেদ নামে ভারতের একজন সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ বলছেন, বেশীরভাগ ওয়েবসাইট-ই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আর সেগুলিতে অতি স্পর্শকাতর কোনও তথ্য থাকারও কথা নয়৻ 

প্রচার করাই এই কথিত যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা৻

Sunday, February 12, 2012

বাংলাদেশ-ভারত সাইবার যুদ্ধ!

'সাইবার যুদ্ধে' নেমেছে বাংলাদেশ ও ভারতের হ্যাকাররা। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে দুই দেশের ওয়েবসাইটগুলোতে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চলছে। ইতিমধ্যেই দুই দেশের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটসহ সহস্রাধিক সাইট হ্যাক্ড হয়েছে। প্রতিপক্ষের ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে লিখে দেওয়া হচ্ছে নিজেদের স্লোগান।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) হাতে নিরীহ বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে 'বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস' (বিবিএইচএইচ) গ্রুপ গত বৃহস্পতিবার নতুন করে ভারতের বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর ভারতীয় হ্যাকার গ্রুপগুলোও বাংলাদেশি সাইবার স্পেস ধ্বংস করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়ে পাল্টা হামলা চালায়।
  ইতিমধ্যে ভারতীয় হ্যাকার গ্রুপের আক্রমণে পড়েছে বাংলাদেশ সরকারের ছোট-বড় অর্ধশত ওয়েবসাইট। পাশাপাশি ৩০০ থেকে ৪০০ বেসরকারি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটও ইতিমধ্যে আক্রমণের শিকার হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশি হ্যাকারদের কবলে রয়েছে শতাধিক ভারতীয় ওয়েবসাইট। এর মধ্যে সরকারি এবং বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটও রয়েছে। বৃহস্পতিবার শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ওই দিন রাতের প্রথম আক্রমণেই বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট থেকে অনেক তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করে দেয় ভারতীয় হ্যাকাররা। প্রকাশিত একটি ডকুমেন্টে দেখা যায়, পুলিশের ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড রয়েছে সেখানে। গত শুক্রবার বাংলাদেশের পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ভারতীয় হ্যাকাররা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এগুলো হলো যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ, যুব ও ক্রীড়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আক্রান্ত হয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইটও। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে চারটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে কালো স্ক্রিনে লেখা দেখা যায়, 'হ্যাক্ড বাই লাভ দ্য রিস্ক, অমল লন্ধে, এলএনএঙ্ রুট, সাইলেন্ট কিলার।' একইভাবে হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে রাজশাহীর পুলিশ কমিশনারের ওয়েবসাইট, ফায়ার সার্ভিসের ওয়েবসাইট, বরিশাল জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট। ভারতীয় হ্যাকারদের কবলে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক্ড হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে হ্যাকিং সংবাদ পোর্টাল সিকিউরিটি রে বলছে, ভারতীয় হ্যাকাররা শতাধিক ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে, আর বাংলাদেশি হ্যাকাররা দাবি করেছে তারা পাঁচ শতাধিক ওয়েবসাইট আক্রমণে সক্ষম হয়েছে। অবশ্য দুই দেশেই হ্যাক্ড হওয়া সাইটগুলোর বেশির ভাগ সংশ্লিষ্ট সাইট কর্তৃপক্ষ পুনরুদ্ধার করে ফেলেছে।

গত শনিবার ওয়েবসাইট হ্যাক্ড হওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি জানতে পেরেছি, ওয়েবসাইট পুনরায় সচল করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'

বিবিএইচএইচের ঘোষণার পর আরো কয়েকটি বাংলাদেশি হ্যাকার গ্রুপ তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোতে আক্রমণ শুরু করে। ইতিমধ্যে 'এঙ্পায়ার সাইবার আর্মি' এবং 'বাংলাদেশ সাইবার আর্মি' গ্রুপের নাম পাওয়া গেছে। ওদিকে ভারতীয় হ্যাকারদের নেতৃত্ব দিচ্ছে 'ইন্ডিশেল' নামের একটি গ্রুপ। বাংলাদেশ এবং ভারতীয় হ্যাকারদের মধ্যে কথোপকথনের একটি ডকুমেন্ট কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে। সে ডকুমেন্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে গতকাল রবিবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্লাকহ্যাট হ্যাকারস গ্রুপের সদস্যরা ভারতের একটি বড় মাপের সার্ভার হ্যাক করেছে, যেখানে দেড় হাজারেরও বেশি ভারতীয় ওয়েবসাইট হোস্ট করা ছিল। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার রাতে জোরালোভাবে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকার গ্রুপগুলোও। সূত্র মতে, তাদের প্রধান টার্গেট বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সার্ভার আক্রমণ। এটি করা সম্ভব হলে সার্ভারে থাকা কয়েক হাজার বাংলাদেশি ওয়েবসাইট ভারতীয় হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। একই সঙ্গে ডটকম ডটবিডি ডোমেইনগুলোর নিয়ন্ত্রণও পেয়ে যাবে তারা। তবে ভারতীয় হ্যাকারদের সব আক্রমণ প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছেন 'বাংলাদেশ সাইবার আর্মি' সঞ্চালকরা।

সাইটের নিরাপত্তা বৃদ্ধির পরামর্শ : ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং সেন্টার ফর টেকনোলজি ডেভেলপমেন্টের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা জাবেদ মোর্শেদ জানান, 'এখন আমাদের ইমেডিয়েট কাজ হবে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সাইটগুলো যে ওয়েব সার্ভারে আছে তার নিরাপত্তার দিকগুলো খতিয়ে দেখা। যত দ্রুত সম্ভব ওয়েব সার্ভারের লেটেস্ট ভার্সনে আপগ্রেড করত হবে। এ ছাড়া সার্ভারের কোনো সিকিউরিটি প্যাঁচ থাকলে তা আপডেট করা, অ্যাডমিন ও সি প্যানেলের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং প্রয়োজনে শক্তিশালী করাটাও বেশ জরুরি।'

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যারা ওয়েবসাইটগুলো তৈরি করছেন, তাঁরা যথাযথভাবে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই হ্যাকারদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। ওয়েব নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, নিয়ন্ত্রণে অবহেলার কারণেই এমনটি হচ্ছে। মোস্তফা জব্বার বলেন, হ্যাকাররা রাষ্ট্রের ভয়াবহ ক্ষতি করছে, তারা যেকোনো দেশেরই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ধ্বংসের জন্য যেন ওরা মাঠে নেমেছে।

বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ : 'বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার' গ্রুপ ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে বিএসএফ প্রধানের উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তাও প্রকাশ করেছে। বার্তায় বলা হয়, 'হ্যালো বাংলাদেশের নাগরিকরা, আমরা বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস। এখন সময় আমাদের চোখ খুলবার। বিএসএফ এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। তাদের গুলিতে আহত হয়েছে আরো ৯৮৭ বাংলাদেশি। অপহৃত হয়েছে হাজারো মানুষ। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তারা অবিচার করছে। সংকটময় এ মুহূর্তে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ববোধ রয়েছে, আমরা চাই ভারত সরকার নিরপরাধ বাংলাদেশিদের হত্যা করা বন্ধ করুক। নতুবা আমরা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধ শুরু করব। এটি চলতেই থাকবে।'

এদিকে হ্যাকিং সংবাদ পোর্টাল সিকিউরিটি রে সূত্রে জানা গেছে ইন্ডিশেল হ্যাকার গ্রুপের পাল্টা পরিকল্পনার কথা। এ গ্রুপের এফএফই এসএসএঙ্টি প্রিন্স ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, 'পাকিস্তানে অপারেশনের পর আমরা এখন চিন্তা করছি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপারেশন শুরু করব। বাংলাদেশি হ্যাকার গ্রুপ বিবিএইচএইচের কিছু হ্যাকারের আচরণের কারণে আমাদের এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ইন্ডিশেল হ্যাকার দল এখন দেখাবে হ্যাকিং কাকে বলে!'

প্রায় মাসখানেক ধরেই দুই দেশের সাইবার আর্মি গ্রুপগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মূলত সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশি হ্যাকাররা ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলো আক্রমণ শুরু করলে ভারতীয় হ্যাকাররাও এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
  গত মাসে বাংলাদেশি হ্যাকার গ্রুপ বিবিএইচএইচ প্রথম আলোচনায় আসে অর্ধশতাধিক ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক করে। এর মধ্যে ভারত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটও ছিল। গত ২৫ থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারের সদস্যরা এগুলো হ্যাক করে। অধিকাংশ সাইটের হোমপেইজ পরিবর্তন করে সেখানে লেখা হয়েছে, 'ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে সাইটগুলো হ্যাক করা হলো।' কয়েকটি সাইটে বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোরী ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবিও যুক্ত করে দেওয়া হয়।
হ্যাকিংয়ের পর ভারতের মহারাষ্ট্রের হাইওয়ে পুলিশের ওয়েবসাইটে 'অ্যাবাউট আস' পেইজে লেখা হয়, 'সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি আমরা কখনো ভুলব না, কখনো ক্ষমা করব না এবং তাদেরকে ছেড়ে দেব না। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করো, অথবা আমরা তোমাদের সাইবার স্পেস ধ্বংস করে দেব। কোথায় তোমাদের মানবিকতা, কোথায়? এটি বিএসএফের জন্য খুব লজ্জাজনক।' এ হ্যাকিং ঘটনার পরের সপ্তাহেই বিএসএফের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে। বাংলাদেশি হ্যাকাররা ডিস্ট্রিবিউটেড ডেনিয়েল সার্ভিস (ডিডস) আক্রমণ করে বিএসএফের ওয়েবসাইট অফলাইন করে ফেলে। এরপর টানা ছয় ঘণ্টা ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেননি কেউ। ভিজিটরদের ওয়েবসাইটের কনটেন্ট না দেখিয়ে সোর্সকোর্ড দেখাচ্ছিল ব্রাউজার।

এবার 'অপারেশন ইন্ডিয়া, ফেজ-২' : সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন বাড়ছে লড়াইয়ের তীব্রতা। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে হ্যাকারদের স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকে, অংশ নিতে চাইছেন ভারতের বিরুদ্ধে এই সাইবার যুদ্ধে।
  আর এ কারণে 'অপারেশন ইন্ডিয়া, ফেজ-২' নামে নতুন সাইবার আক্রমণ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশি হ্যাকাররা।
ভারতীয় হ্যাকার কর্তৃক বাংলাদেশি ওয়েবসাইটগুলোতে আক্রমণ শুরু হওয়ায় আতঙ্কে আছেন অনেক বাংলাদেশি ওয়েব মাস্টার। কম নিরাপত্তাবিশিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো সহজেই ভারতীয় হ্যাকারদের আক্রমণে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশি ওয়েব মাস্টারদের ওয়েবসাইটের ব্যাক-আপ রাখা এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

গত বৃহস্পতিবার থেকে এই সাইবারযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যত সময় যাচ্ছে ততই বাড়ছে সাইবার আক্রমণ। বাংলাদেশি হ্যাকাররা বলছে, 'যতক্ষণ সীমান্ত হত্যাকাণ্ড না থামবে ততক্ষণ থামবে না আমাদের সাইবার যুদ্ধ।' এদিকে ভারতীয় হ্যাকার গ্রুপ ইন্ডিশেলের বরাত দিয়ে সিকিউরিটি রে জানিয়েছে, বাংলাদেশি হ্যাকারদের আক্রমণ না থামলে তারাও তাদের আক্রমণ থামাবে না।'

এদিকে দুই দেশের এ 'সাইবার ওয়্যার' বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে আন্তর্জাতিক হ্যাকার কমিউনিটিগুলো। 'ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার' গ্রুপের একজন মডারেটর নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপ জেডএইচসি এবং দ্য হ্যাকার আর্মি ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশি হ্যাকাররাও বেশ দক্ষ। ভারত তাদের সীমান্ত হত্যাকাণ্ড না থামালে আমরা পুরো ভারতের সাইবার স্পেসকে হেল বানিয়ে দেব।'

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং আলোচিত হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাসও বাংলাদেশি হ্যাকার গ্রুপগুলোর সঙ্গে কাজ করবে বলে স্থানীয় হ্যাকাররা দাবি করছে। তবে অ্যানোনিমাস অফিসিয়ালি কোনো ভিডিও প্রকাশ করেনি বা তথ্য দেয়নি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশি হ্যাকার গ্রুপের একজন মডারেটর জানান, 'অ্যানোনিমাসের শীর্ষস্থানীয়দের থেকে ইতিমধ্যে আমরা সম্মতি পেয়েছি।'
  Source :

Saturday, February 11, 2012

অপসংস্কৃতি প্রদর্শন,বিপিএল কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাইতে হবে

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অপসংস্কৃতি প্রদর্শনের ঘটনায় বিপিএল কর্তৃপক্ষকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্ষমা না চাইলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথাও বলেছে জোটটি।

আজ শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। প্রতিবাদ সমাবেশের সভাপতি হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রগতি হোক তা আমরাও চাই। কিন্তু ক্রিকেটের নাম ভাঙিয়ে ফায়দা লোটা হচ্ছে আজ। বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যে অপসংস্কৃতি প্রদর্শন করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অনুষ্ঠানে একুশ ও বাংলা ভাষাকেও অপমান করা হয়েছে। কাজেই বিপিএল কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাইতেই হবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, দেশের মূল্যবোধ আজ ভূলুণ্ঠিত। একটি চ্যানেল উদ্বোধনীতেই যেভাবে অপসংস্কৃতি প্রদর্শন করল, তারপর এটাই বলতে হবে যাকে-তাকে চ্যানেল দেওয়া ঠিক নয়।

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল আলম বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি সুন্দর ও শালীন। বিপিএল তাতে আঘাত হেনেছে। যারা এই আঘাত করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে।

আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যা হয়েছে, তাতে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেছে। কেবল প্রতিবাদই নয়, এ ধরনের অপসংস্কৃতি আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’

বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি নাট্যকার মান্নান হীরা বলেন, যে অপসংস্কৃতি প্রদর্শন করা হয়েছে, সেটি ফড়িয়া ও ফাটকাবাজদের সংস্কৃতি। মুনাফার জন্য তারা এটি করেছে। এ দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার যেমন জরুরি, তেমনি সংস্কৃতি হত্যাকারীদেরও বিচার করতে হবে।

বাংলাদেশে গণশিল্পী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক ও রুটির সংগ্রামের চেয়ে রুচির সংগ্রাম কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই এ ধরনের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।