Thursday, January 26, 2012

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ফেব্রুয়ারিতে চুক্তি

মহাশূণ্যে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন(বিটিআরসি)।

এরই মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে এসপিআইকে নির্বাচিত করা হয়েছে। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাবে।

এসপিআইকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী মাসেই এ সংক্রান্ত চুক্তি হবে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জিয়া আহমেদ (অব.) বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব।

দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ, টেলিফোন, রেডিওগুলো বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়ায় ব্যবহার করে। এতে প্রতি বছর ভাড়াবাবদ বাংলাদেশকে ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গুনতে হয়। নিজস্ব স্যাটেলাইট চালু করতে পারলে দেশে শুধু বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয়ই করবে না, সেই সঙ্গে অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রচুর অর্থ আয় করা যাবে।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি কাঠামো তৈরি, গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবস্থাপনা, বাজার মূল্যায়ন, স্যাটেলাইট বাজারজাতকরণ এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি সব প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করবে।

প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসপিআইকে দিতে হবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

বিটিআরসি এরই মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) কাছে কক্ষপথের ১০২ ডিগ্রি পূর্বে স্লট চেয়েছে। তবে বিটিআরসির এই স্লটে আপত্তি জানিয়েছে ১৮টি দেশ।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পরপরই এসপিআই এসব দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসবে।

বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ১০২ ডিগ্রি স্লটটি সবচেয়ে উপযুক্ত। এজন্য এসপিআইকে দেনদরবার করে আমাদের অনুকূলে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে হবে।

বিটিআরসি আবেদন আহ্বান করলে প্রায় ৩৩টি প্রতিষ্ঠান এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) জমা দেয়।

এর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত কার্যাদেশ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য বাছাই করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স ও ইন্দোনেশিয়া থেকে সাতটি প্রতিষ্ঠান দর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল।

আর্থিক ও প্রযুক্তিগত প্রস্তাব যাচাইয়ের পর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এসপিআইকে নির্বাচিত করা হয়।

বিটিআরসি’র বিশেষজ্ঞদের মতে, হাওড়-বাওর, পাহাড় এবং সিলেট ও চট্টগ্রামের দ্বীপগুলোসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলায় এখন পর্যন্ত সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্ক পর্যাপ্ত নয়। তাই স্যাটেলাইট প্রযুক্তি চালু করা খুবই জরুরি। 


পদ্মা সেতু : কানাডার তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বব্যাংক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে সরকার তাদের তহবিল নেবে না। আর বিশ্বব্যাংক বলেছে, দুর্নীতি প্রমাণের জন্য তারা কানাডার পুলিশের তদন্তের অপেক্ষায় আছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে তবেই পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত তারা নেবে।

এদিকে আজ ২৭ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর জন্য দেওয়া বিশ্বব্যাংকের ঋণের কার্যকারিতা। এর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করে রেখেছে সরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ওয়াশিংটন ঋণের মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এ-সংক্রান্ত চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) ১৯তম জাতীয় সম্মেলন ও ৩৫তম কাউন্সিল অধিবেশনের পদ্মা সেতু নিয়ে আবারও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমরা মিথ্যা অভিযোগে মোড়ানো কোনো তহবিল গ্রহণ করতে পারি না।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই বিশাল প্রকল্পের ব্যাপারে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরপরই সরকার তা তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করে। কিন্তু দুদক এখনো এই প্রকল্পে কোনো প্রকার অনিয়ম খুঁজে পায়নি।’

সূত্র জানায়, দুদকের তদন্ত এখনো শেষ না হলেও সরকারি সংবাদ সংস্থা গত সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ পরিবেশন করেছে। ওই সংবাদে বলা হয়েছে, দুদক পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। এমনকি দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘সাকো’রও কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এরপর অবশ্য দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান তাঁদের তদন্ত শেষ হয়নি বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।

বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য: বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন গতকাল পদ্মা সেতুর সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এই বক্তব্য দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘কানাডার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বর্তমানে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ও জালিয়াতি নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করছে। এ অবস্থায় ১২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ এগিয়ে নেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কানাডার ওই তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য বিশ্বব্যাংকের অপেক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে।’

অ্যালেন এই তদন্তকাজ দ্রুত করার জন্য বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে কানাডা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকও এ নিয়ে তদন্ত করছে। এসব তদন্তে দুর্নীতি ও জালিয়াতির জন্য দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুই ধরনের দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে তদারকে প্রাক-নির্বাচনী তালিকায় থাকা কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিন গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অন্যতম অভিযোগ হচ্ছে এসএনসি-লাভালিনকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বাংলাদেশের একাধিক কর্মকর্তা কোম্পানিটির কাছে কমিশন চান। পরামর্শক হিসেবে কাজ পাওয়ার পর এই কাজের বিনিময়ে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা থেকে একটি অংশই কমিশন হিসেবে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে কোম্পানি সম্মত হলে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতাও হয়। এ নিয়েই কানাডার পুলিশ তদন্ত করছে।

এর বাইরে বিশ্বব্যাংক তাদের নিজস্ব যে তদন্ত প্রতিবেদন সরকারকে দিয়েছে, তাতে বলা আছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ বা কমিশন চেয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরা। সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম ব্যবহার করে অর্থ চাওয়া হয়েছে। কমিশন দিলে কাজ পেতে যোগাযোগমন্ত্রী নিজেই সহায়তা করবেন বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় গত বছরের অক্টোবরে পদ্মা সেতুতে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিয়েছিল প্রধান দাতা বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপানের ঋণদান সংস্থা জাইকা। এই অভিযোগ ওঠার পর যোগাযোগমন্ত্রী পদে রদবদলও করা হয়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসএনসি-লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্ত করে অন্যদের মধ্য থেকে পরামর্শক নিয়োগের দরপত্র চূড়ান্ত করার জন্য বিশ্বব্যাংককে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বিশ্বব্যাংক এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। এ কারণেই বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর গতকাল কেবল তদন্ত শেষ হলেই কালো তালিকাভুক্ত করার কথা আবারও বলেছেন।

এর ফলে সামগ্রিকভাবে পদ্মা সেতু নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেল। তবে ঋণের কার্যকারিতার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে কিছুটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ আছে বলেও মনে করছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে কানাডার তদন্ত এবং এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর।