Sunday, April 22, 2012

তিন শর্তে ইলিয়াসের মুক্তি!

তিন শর্ত মানলে ইলিয়াস আলীকে ছেড়ে দেয়া হবে- এই খবরটি ছিল রাজনৈতিক মহলের উচ্চ পর্যায়ের সর্বত্র আলোচনার বিষয়। শর্ত তিনটি হলো: এক. সুরঞ্জিতের এপিএসের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ড্রাইভার আলী আজমকে দিয়ে ঘটিয়েছেন ইলিয়াস আলী। দুই. বলতে হবে তার নিজের দলের লোকেরাই তাকে অপহরণ করেছে। তিন. তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন না। এই খবর দিয়েছে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

শনিবার গাজীপুরের পুবাইলে ইলিয়াসের সন্ধানে র্যাব-পুলিশের অভিযান চালায়। তারা একটি শ্যুটিং স্পটের বাড়িতে এই অভিযান পরিচালনা করে। সূত্র জানায়, এই সময় র্যাব-পুলিশের সঙ্গে ছিলেন ইলিয়াসের স্ত্রী তাহমিনা রুশদী। অভিযানশেষে ঢাকায় ফেরার পথে ইলিয়াসের স্ত্রীকে এই তিন শর্তের কথা বলা হয়।

তাহমিনা রুশদী ঢাকায় পৌঁছেই ছুটে যান খালেদা জিয়ার বাসায়। সেখানে তিনি কথা বলেন নেত্রীর সঙ্গে। সূত্র জানাচ্ছে, এই তিন শর্ত নিয়ে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তাহমিনা রুশদী। সূত্র দাবি করেছে, নেত্রী শর্ত মানার কথা বলে দিয়েছেন তাকে। নেত্রীর বক্তব্য হলো, আগে ইলিয়াস বেঁচে আসুক, পরে বাকিটা দেখা যাবে।

এরপর থেকেই তাহমিনা রুশদী আর কারো সাথে কথা বলছেন না। মিডিয়ার সামনেও আসছেন না। ওই সূত্র দাবি করেছে, তিনি র্যাবকে শর্ত মেনে নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এখন তার একটাই প্রতীক্ষা স্বামী কখন ফিরে আসবে।

এই বিষয়ে র্যাবের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এক ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন
তবে ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন কি আসবেন না, এই প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দিনভর আলোচনা চলে। এতো পরিচিত একজন রাজনৈতিক নেতার এভাবে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গোটা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টিতে অনেকে এই গরমেও শিরদাঁড়ায় হিমশীতল আতঙ্ক অনুভব করছেন।

খবর বেরিয়েছে, বিএনপির নেতারা যাতে একা চলাফেরা না করেন সেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। আরো বলা হয়েছে তারা যেন রাত ১০টার পর আর বাইরে না থাকেন। কখন কোথায় নিখোঁজ হন এই আতঙ্কে ভুগছেন দলের নেতারা।

এদিকে পুলিশ বলছে, ইলিয়াসকে খোঁজার চেষ্টা তাদের অব্যাহত আছে। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম মনিরুজ্জামানের আদালতে জমা দেয়া তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ কথা জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদনে প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পর আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। তার স্ত্রী তাহমিনা রুশদী গত বুধবার বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাটির তদন্তের বিষয়ে আবেদন করলে আদালত ওই নির্দেশ দেন।

রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইলিয়াসকে খুঁজে বের করার নামে সরকার নাটক করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ইলিয়াসকে পুঁজি করে বিরোধী দল রাজনীতি করছে। মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, রাজনীতি অশান্ত করতে ইলিয়াস নাটক সাজিয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেছেন, ইলিয়াসকে সরকার সর্বশক্তি দিয়ে উদ্ধার করবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেকে আশার আলো দেখছেন।

সাধারণ মানুষের কথা হলো, ইলিয়াসকে খুঁজে বের করা হোক। আর এই দায়িত্ব সরকারেরই। আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল জলিলও একথাই বলেছেন। শুধু রাজনীতি নয়, গোটা দেশে ইলিয়াসের নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে যে অরাজকতা, অশান্তি ও উৎকণ্ঠার জন্ম হয়েছে তার সমাধান একটাই- ইলিয়াসকে খুঁজে বের করা। সাধারণ মানুষ বলছে, এটা না হওয়া পর্যন্ত অরাজকতার পারদ বাড়তেই থাকবে।

তার লক্ষণও দেখা দিয়েছে। বিএনপি সোমবারও হরতাল ডেকেছে। জানা গেছে, হরতাল যাতে আর না হয় সে লক্ষ্যে সরকার রোববার বড় রকমের কোনো অ্যাকশনে যায়নি। পুলিশের ভূমিকা তাই প্রমাণ করেছে। কিন্তু বিএনপি মানেনি। তারা সোমবারও হরতাল ডেকেছে। এই হরতাল কি আরো বাড়বে? এই প্রশ্নও ওঠছে। বিএনপির মধ্যে একটি গ্রুপ মনে করে, হরতাল চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে ইলিয়াসকে ফিরে পাওয়া যাবে না। তারা বলছে, এইচএসসি পরীক্ষা তো দু’দিন বাতিল হলো। আরো ক’দিন হলে অসুবিধা নেই। এই গ্রুপটি মনে করে ইলিয়াসের ঘটনায় জনগণ ক্ষুব্ধ। কাজেই হরতাল তারা মেনে নেবে।

ইলিয়াস আলীর উদ্ধার যতো দেরি হচ্ছে, ততই নানা গুজব ডালপালা মেলছে। আর এই ধরনের বার্নিং ইস্যুতে এটা হওয়াই স্বাভাবিক বলেই মনে করেন রাজনৈতিক নেতারা।

আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই ইলিয়াসকে খুঁজে বের করার পক্ষে বলে দাবি করেছে দলের একটি সূত্র। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম শনিবার বলেছিলেন, এই ঘটনায় তারা বিব্রত। এমনিতে আওয়ামী লীগের নেতারা রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে এই বিষয়ে যাই বলুন না কেন- তারা ইলিয়াসকে খুঁজে পেতে আন্তরিক বলে দাবি করেছেন দলের একজন নেতা।

বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা এবং একটি দমবন্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারি ও বিরোধীদল উভয়কেই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এর জন্য দুই প্রধান দলের নেতাদের শত্রুতা মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেছেন, ইলিয়াসকে খুঁজে বের করলে পরিবেশ অনেকটাই শান্ত হবে।

সাবেক আইজিপি ড. এনামুল হক বলেছেন, বর্তমান অচলাবস্থা থেকে বের হতে হলে ইলিয়াসকে খুঁজে বের করতেই হবে। তা না হলে ঠিক কী হয় তা নিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।