Tuesday, February 21, 2012

প্রসঙ্গ ‘সাইবার যুদ্ধ’

বেশ কিছুদিন থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের হাজার হাজার ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের হ্যাকাররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাবি করেছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধে তাদের এ উদ্যোগ এবং এরই মধ্যে তারা ভারতের ২৬ হাজার ওয়েবসাইটে আক্রমণ চালিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সাইবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে হ্যাকাররা। এ পরিস্থিতিতে সর্বত্র চলছে তুমুল আলোচনা। এই সাইবার যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন
আহসান হাবিব
হ্যাকিং নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং ব্লগে।

বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশ ব্যাক হ্যাট হ্যাকার্স’ নামক দলটি গত মঙ্গলবার দাবি করেছে তারা এরই মধ্যে ভারতের ২০ হাজার ওয়েবসাইটের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। এ দাবির সত্যতা পাওয়া গেছে, ভারতের হায়দরাবাদ-ভিত্তিক ইংরেজি ভাষার দৈনিক ক্রনিকল প্রকাশিত এক সংবাদে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী হ্যাকাররা ২০ হাজার ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। বাংলাদেশের এ হ্যাকার গ্রুপটি ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়াসহ জনপ্রিয় শেয়ারবাজার-বিষয়ক সংবাদ ওয়েবসাইটও হ্যাক করেছে। ভারতের ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে—ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের ওয়েবসাইট, ভারতীয় ভ্যালেন্টাইন উপহার কেনার ওয়েবসাইট, নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইন্ডিয়া স্টক এক্সচেঞ্জ, ভারতীয় টেলিকম অপারেটরসহ নানা ওয়েবসাইট বাংলাদেশী হ্যাকারদের আক্রমণের কবলে পড়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ভারতের হ্যাকাররাও চালাচ্ছে পাল্টা আক্রমণ, আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় চারশ’ ওয়েবসাইট।
সব হ্যাকার গ্রুপ একসঙ্গে
বাংলাদেশ ব্লাকহ্যাট হ্যাকারের (বিবিএইচএইচ) ঘোষণার পর আরও কয়েকটি বাংলাদেশী হ্যাকার গ্রুুপ একাত্মতা প্রকাশ করে ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোয় আক্রমণ শুরু করেছে বলে তারা দাবি করেছে। বাংলাদেশ ব্লাকহ্যাট হ্যাকার মিডিয়া রিলেশন গ্রুপের পক্ষে দাবি করা হয়েছে— এক্সপায়ার সাইবার আর্মি, বাংলাদেশ সাইবার আর্মি, আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুুপ জেডএইচসি এবং দ্য হ্যাকার আর্মি এরই মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাসেরও। বাংলাদেশী হ্যাকারদের দাবি তারা বেশ দক্ষ। ভারত তাদের সীমান্ত হত্যাকাণ্ড না থামালে তারা পুরো ভারতের সাইবার স্পেসকে ‘হেল’ বানিয়ে দেবে। এতে ভারতীয় হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের ওয়েবমাস্টারদের যা করতে হবে তার উপায়ও বাতলে বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

নিজ থেকেই সরকারি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত

বাংলাদেশী হ্যাকারদের দ্বারা পর্যুদস্ত হয়ে নিজ থেকেই ভারতীয় সব সরকারি ওয়েবসাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। গত সপ্তাহে ভারতীয় প্রভাবশালী গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত এক সংবাদে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী হ্যাকারদের দ্বারা ভারতীয় ২০ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিএসএফের ওয়েবসাইট ছাড়াও ভারতীয় অনেক সরকারি ওয়েবসাইট রয়েছে এ তালিকায়। বাংলাদেশ সাইবার আর্মি নিজেদের ব্লাকহ্যাট পরিচয় দিয়ে ওয়েবসাইট আক্রমণের এ যুদ্ধে নেমেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদ অনুযায়ী, বিএসএফের মতো সংবেদনশীল ওয়েবসাইটগুলোতে একের পর এক আক্রমণ আসার কারণে সরকার তাদের সব ওয়েবসাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উদ্বিগ্ন প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট

ভারত ও বাংলাদেশের হ্যাকারদের পরিচালিত এই সাইবার যুদ্ধ নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শীর্ষ প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট। তারা ভারত-ভিত্তিক অনলাইন বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছে। হ্যাকাররা মাইক্রোসফট, ভারতের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় এবং সাইটটি ব্যবহারকারীদের তথ্য সরানোর চেষ্টা করে। তবে মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটে এ আক্রমণ বাংলাদেশের কোনো হ্যাকার গোষ্ঠীর কাজ কিনা, তা জানা যায়নি।

হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে ছদ্মবেশে ভারতীয় গোয়েন্দা!

বাংলাদেশী হ্যাকারদের ধরতে ভারতীয় গোয়েন্দারা এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। ভারতের সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ দল এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর (সিবিআই) একাধিক প্রতিনিধি রয়েছে এ দলে। গত বৃহস্পতিবার সাইবার বিশেষজ্ঞ একটি দলসহ ভারত থেকে বিশেষ বাহিনীর এসব একাধিক গোয়েন্দা সদস্য ঢাকায় এসেছেন। ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণকারীর ছদ্মবেশে তারা অবস্থান করছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে যেসব হ্যাকার ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোয় আক্রমণ চালাচ্ছে এবং যেসব হ্যাকার গ্রুপ ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে তাদের গ্রেফতারে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দিল্লির বাংলাদেশী হাইকমিশন বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকলেও দু’দেশের পক্ষেই বিষয়টিতে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। এমন খবর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ মাধ্যম ‘উইকলি ব্লিজ-এ। 
তবে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে এখনও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সংবাদ মাধ্যমটিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশী সাইটগুলোয় বড় ধরনের আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় হ্যাকাররা, যা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন, বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেসের ওয়েবসাইটগুলো আক্রমণই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।

এসব গোয়েন্দা ছদ্মবেশে বাংলাদেশে এলেও ভারতীয় গোয়েন্দা দল বাংলাদেশী হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সহযোগিতা নেবে। সংস্থাগুলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, সাইবার যুদ্ধের বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আর এ কারণে হ্যাকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এরই মধ্যে একটি বিশেষ বাহিনীকে এ ব্যাপারে কাজ শুরুরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তবে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল র্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের প্রধান কমান্ডার সোহায়েল আমার দেশকে জানালেন, এ ধরনের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তিনি এটাকে ভিত্তিহীন গুজব বলে মনে করেন। তিনি বলেন, কোনো ওয়েবসাইট যদি হ্যাক হয় তবে অপরাধী ধরতে র্যাব সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এ ব্যাপারে র্যাবের রয়েছে প্রযুক্তিতে দক্ষ শক্তিশালী টিম।

ভিডিও বার্তায় হ্যাকারদের উদ্দেশ্য

ই-মেইলে পাঠানো ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার গ্রুপ বলছে, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার। ভারতে সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমরা সম্প্রতি ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোয় ব্যাপক আক্রমণ শুরু করেছি। আমাদের খারাপ কোনো উদ্দেশ্য নেই, আমরা সীমান্তে বিএসএফের হাতে মরতে চাই না। চাই মানুষের মতো বাঁচতে, বিএসএফের কাছে কুত্তার মতো গুলি খেয়ে মরতে চাই না। সীমান্তে যাতে নিরীহ মানুষকে আর মরতে না হয় সে দাবিতে আমরা সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছি।

ইন্টারনেটে যৌথভাবে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে, ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার গ্রুপ, বাংলাদেশ সাইবার আর্মি এবং এক্সপায়ার সাইবার আর্মি। এসব ভিডিওটিতে রোবোটিক ভাষায় হ্যাকাররা জানিয়েছে, প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের উদ্দেশ্য সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া। আমরা এরই মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইটে আক্রমণ চালিয়েছি। ভারতের সাইবার স্পেস এখন আমাদের দখলে রয়েছে। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, ভারত সরকার আমাদের বার্তাটি এখনও বুঝল না। তারা বিএসএফের সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 

এখন আমরা বলতে চাই, ভারত সরকারকে অবশ্যই সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের গুলির নির্দেশ তুলে নিতে হবে। 

সামপ্রতিক দেয়া বিবৃতিটি বাতিল করার জন্য বিএসএফ প্রধানের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা বুলেট মুক্ত ভারত বাংলা সীমান্ত চাই। নিরীহ মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা দাও। আমাদের আরও একটি নতুন ইস্যু আছে, টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ কর। আমাদের সাইবার যুদ্ধ চলতেই থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারতীয় অপরাধ থামাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয়। আমাদের নিরাপদ জীবন দাও, নিরাপদ সাইবার বিশ্ব বুঝে নাও!

সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি আমরা কখনও ভুলব না, কখনও ক্ষমা করব না এবং তাদের ছেড়ে দেব না। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ কর অথবা আমরা তোমাদের সাইবার স্পেস ধ্বংস করে দেব। কোথায় তোমাদের মানবিকতা, কোথায়? এটি বিএসএফের জন্য খুব লজ্জাজনক।

টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করতে হবে। তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। ভারতীয় মিডিয়াগুলোকে হয় বাংলাদেশে বন্ধ করতে হবে অথবা বাংলাদেশের মিডিয়াকে ভারতে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড থামাতে হবে নতুবা আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, তোমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি খাত এবং শেয়ারবাজার ওয়েবসাইট ধ্বংস করে দেব।

তির্যক মন্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ

সাম্প্রতি সাইবার যুদ্ধ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেছেন, ‘যারা ভারতীয়দের সাইবার স্পেস ধ্বংস করছে, তারা স্বাধীনতাবিরোধী ও ইসলামী সন্ত্রাসী’। গত শুক্রবার বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার্স সংগঠনের নামে ই-মেইলে পাঠানো একটি বার্তায় এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের হ্যাকার গ্রুপ ব্ল্যাকহ্যাট। হ্যাকার গ্রুপটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘এভাবে মিথ্যাচার না করলেও পারতেন। আমরা কোনোভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী নই।’

বাংলাদেশী হ্যাকারদের ভাষ্য, ‘আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ নেই, আমরা ধর্মীয় সন্ত্রাসীও নই। দেশের নিরীহ মানুষের বুকে তাজা গুলি এবং রক্তেভেজা মাটি যাঁরা সহ্য করতে পারেননি, সে তরুণরাই সাইবার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই প্রতিদিন যুদ্ধে যুক্ত হচ্ছেন সাধারণ যোদ্ধারা। আমাদের কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। আমরা স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কার্যকলাপ তো করছিই না, বরং স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধেই আওয়াজ তুলছি। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা বৌদ্ধ—সব ধর্মের সাইবার যোদ্ধাই নীরবে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন।’ হ্যাকার সংগঠনটি আরও বলেছে, আমরা আজ যে প্রতিবাদ করছি, আসলে এর কোনো দরকার ছিল না, যদি আমাদের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকরা তাদের স্থান থেকে সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান করতে পারতেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যারা হ্যাক করছে তাদের বোঝা উচিত বাংলাদেশের আইটি সেক্টর ভারতের চেয়ে অনেক দুর্বল। ভারতীয় আইটি এক্সপার্টরা যদি বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেয় তাহলে এর ফল খুব ভালো হবে না। তিনি দাবি করেন, এসব হ্যাকারকে উত্সাহিত করছে কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী ও মিডিয়া। আর এদের সঙ্গে জড়িত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের হ্যাকাররা।

হ্যাকার গ্রুপের এক প্রতিবাদে মোস্তাফা জব্বারের এ বক্তব্যের জন্য তাকে ‘ভারতের দালাল’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। হ্যাকার গ্রুপের প্রতিবাদে বলা হয়, ‘দেশের নামসর্বস্ব তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, আমরা নাকি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ধ্বংস করার জন্য নেমেছি। তাকে বলতে চাই, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কতটি বছর ধরে আপনারা পিছিয়ে রেখেছেন তা কি আমরা ভুলে গেছি? তরুণরা অনেক কিছুই বোঝে, অন্তত কোনটি ভালো কোনটি মন্দ সেটি বোঝার ক্ষমতা তাদের আছে। তারা এটাও বোঝে যে, কী কী বাধা তৈরি করে আপনারা দেশের তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছেন।’

অন্যদিকে এটিএন নিউজে ‘কোড রেড’ নামে জনৈক ব্যক্তিকে মুখোশ পড়িয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে সাইবার যুদ্ধের নেতা হিসেবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার্স-এর পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদ বার্তায় বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার, এক্সপায়ার সাইবার আর্মি এবং বাংলাদেশ সাইবার আর্মির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এটিএন নিউজের এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাই। আমরা জানতে পেরেছি, মুন্নি সাহা পুরো কাহিনীটি তৈরি করেছেন। ভবিষ্যতে ভারতপ্রেমী অনেক সাংবাদিকের কল্যাণে হয়তো অনেক হ্যাকার নেতাকে টেলিভিশনে দেখা যাবে, তাদের বিশ্বাস না করার জন্যও ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ফেসবুক, টুইটার, বিভিন্ন ব্লগ তথা অনলাইন কমিউনিটিতে এসব মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কোনো কোনো সাইটে মন্তব্যকারীদের ছবিতে জুতা পরিয়ে তাদের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।